সারা বাংলা

বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট

পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেট আবারো ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি  হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। 

এদিকে সিলেট নগরের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরেও বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়া নগরীর সঙ্গে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সিলেটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ দশমিক ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। কানাইঘাটে সুরমা বিপদসীমা ১০.৮০ সে:মি উপরে ছিল। 

ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারার পানি সকাল ৯টার দিকে বিপদসীমার ৯.৭৫ সে: মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারি নদীও বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টগুলোতে বুধবার থেকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

সিলেট নগরীর কালিঘাট, মহাজন পট্টি, শাহজালাল উপশহর, তালতলা, মাছিমপুরসহ সুরমা নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ঘর বাড়িতে পানি ঢুকেছে। তালতলার ফায়াস স্টেশনে পানি প্রবেশ করায় অন্যত্র অবস্থান নিয়েছেন ফায়ার কর্মীরা। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নিচ তলায়ও পানি ঢুকার উপক্রম হয়েছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর, টুকেরবাজার, জালালাবাদ, মোগলগাঁও, কান্দিগাঁও, হাটখোলা ইউনিয়নের নম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে বন্যার পানিতে। এসব এলাকার হাট-বাজার, মসজিদ, স্কুল-মাদরাসা ও ভিটেবাড়ি, রাস্তাঘাট, ক্ষেত ও বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। 

কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহ আলম জানান, বুধবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের বর্ণি অংশ দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হয়। গত মাসে হয়ে যাওয়া বন্যার ক্ষত না শুকাতেই আবারো বন্যা দেখা দেওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধরণ মানুষজন। 

কোম্পানিগঞ্জে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৯০ ভাগ মানুষ। ঘরের ভেতরে পানি উঠে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই। পানির কারণে স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এছাড়া বন্যায় তলিয়ে গেছে উপজেলা সদরের সব সড়ক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসাসহ সরকারি সব বাসভবনের নিচতলায় পানি প্রবেশ করেছে। 

উপজেলা ভূমি অফিস, থানা কম্পাউন্ড, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, এলজিইডি অফিস, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক বলেন, ৮-১০টি ব্যতিত উপজেলার সব স্কুলের মাঠে পানি উঠেছে।  গোয়াইনঘাট উপজেলার ৯৫ ভাগ ঘর বাড়িতে পানি উঠেছে। এ উপজেলায় কয়েক লাখ মানুষ পানি বন্দি রয়েছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নে ৪০ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সারি-গোয়াইনঘাট সড়ক, গোয়াইনঘাট-সালুটিকর সড়ক ডুবে থাকায় জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাহমিলুর রহমান জানান, বন্যার্তদের জন্য ৪০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তাছাড়া ৪৪ টন চাল পানিবন্দি মানুষদের মধ্যে বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

কানাইঘাট উপজেলায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লোভা-সুরমা নদীর পানি বাড়তে থাকে। সুরমা নদীর প্রবল ঢলে উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের কুওরঘড়ি সুরমা ডাইকের ভাঙন কবলিত এলাকা দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম, বড়চতুল ও পৌরসভার ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা, রাস্তা-ঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

জৈন্তাপুরে উপজেলার নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার আসামপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইমরান আহমদ মহিলা ডিগ্রি কলেজ, বিরাইমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডুলটিরপাড়াসহ আরও অনেক স্কুলে পানি প্রবেশ করেছে।

জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল বশিরুল ইসলামসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন।

সিলেট আবহওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, সিলেটে প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ২৩ জুন পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পানি বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন নদনদীর ৪টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।  

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারী অব্যাহত রয়েছে। বুধবার বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোতে আরো ২৫৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’