সারা বাংলা

মিয়ানমারে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা

নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে স্বাধীনতা ও নাগরিকত্ব নিয়ে ফিরতে চান উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা।

বিভিন্ন দাবি নিয়ে নিজ দেশে তাদের ফিরিয়ে নিতে রোববার (১৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানববন্ধন করেন তারা। মানববন্ধনে ক্যাম্পভিত্তিক হাজার হাজার নারী পুরুষ অংশ নেন। তাদের স্লোগান ছিল 'লেটস গো হোম'।

এদিন সকাল থেকে উখিয়ার কুতুপালংয়ের ৩ নম্বর লম্বাশিয়া, ৪ নম্বর মধুরছড়া, বালুখালীর ৫ নম্বর, ১৭ নম্বর ও ১৮ নম্বর মোচরা ক্যাম্পে এসব মানববন্ধন করেন তারা।

তাদের দাবি- গত ৫ বছর ধরে তারা শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে বাস করছেন। মিয়ানমারের ১৩৫ জাতির মতো তারাও নাগরিক সুবিধা দিয়ে তাদের গ্রামে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। এবং তাদের জ্বালিয়ে দেওয়া ঘরবাড়ি ও ফসলি জমির ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। স্বাধীনভাবে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

মানববন্ধনে তারা দাবি তুলেন-তাদের মূল অধিকার পুনরুদ্ধার করতে হবে। স্বীকৃতি দিতে হবে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সময় সীমিত করতে হবে। প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করণ এবং প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত প্রত্যেক চুক্তি অন্তর্ভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ওআইসি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশ, এনজিও সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাবাসনে অন্তর্ভুক্ত করণ, মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

কুতুপালং তিন নম্বর লম্বাশিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা শামশুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের করুণায় ৫ বছর এদেশে থাকলাম। তবে এবার নিজ দেশে অধিকারের দাবি নিয়ে ফিরতে চাই। আমাদের ক্ষতিপূরণ, স্বাধীনতা ও নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করার জন্য মিয়ানমার সরকারের কাছে অনুরোধ করছি। নিজ দেশে ফিরে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই। এসব দাবি মেনে নিয়ে আমাদের ফিরিয়ে নিতে আমরা এই সমাবেশ করছি।’

রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার ত্বোহা বলেন, ‘আমরা অবশ্যই মিয়ানমারে ফিরতে চাই। আমাদের রোহিঙ্গা হিসেবে মেনে নিলে আমরা মিয়ানমারে চলে যাবো। আমাদের নিরাপত্তা দিয়ে ফেরত নিতে হবে।  আমরা আমাদের ক্ষতিপূরণ চাই এবং আমাদের মা-বোনদের যেভাবে অত্যাচার করেছে সে বিচারও চাই। এখানে আমরা কষ্ট পাচ্ছি। স্বাধীনতা পাচ্ছি না। তাই নিজ দেশে ফিরতে আমরা একতাবদ্ধ হয়েছি।’

কুতুপালং ক্যাম্পের শিক্ষক সলিম উল্লাহ বলেন, ‘পরাধীনভাবে বেঁচে থাকতে কেউ চায় না। গত ৫ বছর ধরে আমরা শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে রয়েছি। মিয়ানমার আমাদের মাতৃভূমি, আমরা আমাদের জন্মভূমিতে ফিরতে চাই। মিয়ানমারে বসবাসরত ১৩৫ জাতির মতো ওই সরকার আমাদের যেন স্বীকৃতি দেয়। আমাদের যেন নিরাপত্তা দেয় এবং জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশ ও সংগঠনের সঙ্গে বসে সঠিক পন্থায় আমাদের ফিরিয়ে নেয়। আমাদের দাবি মেনে নিয়ে, রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে নিজ দেশে বসবাস করার অধিকার দেয় সেজন্য আমরা সব ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা মানববন্ধন  করছি।’

অতিরিক্ত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ মিছিল বা সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে মানববন্ধনের মাধ্যমে ছোট পরিসরে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অনুভূতি প্রকাশের অনমুতি দেওয়া হয়েছে। তাদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না।

প্রতি বছর রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসন ও অধিকার নিয়ে গণজমায়েত, মানববন্ধন ও সমাবেশের নেপথ্যে একাধিক সংগঠন আয়োজন করলেও এবারের মানববন্ধনের আয়োজনে কোনো সংগঠনের নেতৃত্ব ছিল না বলে জানায় রোহিঙ্গারা। তারা নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে যার যার মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিটি ক্যাম্পে মানববন্ধন করেছে বলে জানায়।