বন্যায় কুড়িগ্রামে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগলসহ অন্যান্য গবাদি পশুর খাবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বানভাসি মানুষ।
সরকারি হিসেবে এবারের বন্যায় কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলার ৪৯টি ইউনিয়নের ৩৮ হাজার ৯৭ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা বলা হলেও এর পরিমাণ আরও বেশি। টানা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা বন্যার কিছুটা উন্নতি হলেও এখনও তলিয়ে আছে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের চারনভূমি ও বসতভিটা। দ্রুত পানি নেমে না যাওয়ায় নিজেদের খাদ্য সংকটের পাশাপাশি গো-খাদ্যের সংকট নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার কৃষকরা।
একদিকে তলিয়ে আছে চারনভূমি অন্যদিকে অতিবৃষ্টি ও বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে খড়। এ অবস্থায় নিজেদের খাবার জোটানোর পাশাপাশি গো-খাদ্যের জোগান দেওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে বন্যা দুর্গতদের কাছে। সরকারিভাবে গো-খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা কৃষকদের নিকট পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গবাদিপশুর মালিকদের।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের মজিবর রহমান বলেন, বাড়িতে পাঁচটি গরু ও চারটি ছাগল রয়েছে। নিজেরা তো কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি। কিন্তু গরু আর ছাগল নিয়ে বিপদে পড়েছি। একদিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে চর। অন্যদিকে অতি বৃষ্টিতে খড় শুকাতে পারিনি। আবার যেটুকু শুকিয়েছি তা বন্যার পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
একই ইউনিয়নের খেয়ার আলগার চরের মইনুদ্দি বলেন, আমাদের চরের মানুষের একমাত্র আয়ের উৎস গবাদি পশু। সারা বছর এই গবাদি পশু লালন-পালন করে কোরবানির ঈদে বিক্রি করে কিছু টাকা পাই। তা দিয়ে সংসারের সমস্যা মেটাই। কিন্তু এবার যে অবস্থা হয়েছে। বন্যায় চারনভূমি ঘাস নষ্ট হয়েছে। বাড়ির খড়ও পচে গেছে। বাজারে গো-খাদ্যেরও দাম বেশি। এ অবস্থায় গরু পোষা সম্ভব হবে না।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল হাই সরকার বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় বন্যার পানিতে গো-খাদ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ও চারনভূমি তলিয়ে থাকায় গবাদি পশুর খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে। চলতি বন্যায় জেলার ৮৮৭ হেক্টর চারনভূমি তলিয়ে গেছে পাশাপাশি নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় শতাধিক টন গো-খাদ্য। বন্যাকবলিত কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৯ উপজেলায় ১৮ লাখ টাকার গো-খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।