সারা বাংলা

টাঙ্গাইলের হাটে পশু থাকলেও জমে ওঠেনি বেচাকেনা

ঈদ উল আজহা বা কোরবানির ঈদ যতোই এগিয়ে আসছে টাঙ্গাইলের হাটগুলোতে ততোই কোরবানি যোগ্য পশু নিয়ে আসতে শুরু করেছেন বিক্রেতারা। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু, মহিষ, ছাগল ভেড়া নিয়ে আসছেন তারা। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, হাটগুলোতে প্রচুর পরিমাণ পশু থাকলেও অধিকাংশ ক্রেতাই দাম যাচাই বাছাই করে চলে যাচ্ছেন।

ক্রেতাদের অভিযোগ, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর কোরবানির পশুর দাম বেশি চাচ্ছেন পশুর মালিক ও ব্যাপারিরা।

সরেজমিনে ভুঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী গরুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর সংখ্যক দেশি বিদেশি গরু উঠেছে হাটে। পর্যাপ্ত পশু থাকলেও ক্রেতা তেমন নেই। আবার কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় খামারীরাও গরু বিক্রি করছেন না। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও রোববার গরুর হাট বসে এখানে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলায় স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে ৩৭টি। এছাড়াও কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে আরো ৫৯টি অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় কোরবানি ঈদে পশুর চাহিদা ৮১ হাজার ০৫টি। প্রস্তুত রয়েছে ৮৭ হাজার ৯১টি পশু। চাহিদার চেয়ে ৬ হাজার ৮৬টি পশু বেশি রয়েছে। মোট পশুর মধ্যে ষাঁড় ৪৪ হাজার ৮২৭টি, বলদ ৬ হাজার ৭টি, মহিষ ২৩৩টি, ছাগল ২৪ হাজার ১৮২টি, ভেড়া ৩ হাজার ৫৬৪টি ও অন্যান্য ৩২টি। হাটে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর গরুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ভুষি, খড়, খৈলসহ পশুর খাদ্যের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বাড়তি দামে পশু খাদ্য কিনতে হচ্ছে। ফলে দাম বেড়েছে গরু ছাগলের।

হাটে আসা টাঙ্গাইল শহরের আকুর টাকুর পাড়ার আরিফুল ইসলাম বলেন, গোবিন্দাসী হাটের পশুর দাম জেলার অন্য হাটের তুলনায় একটু কম। তাই এই হাটে গরুর দাম যাচাই করতে এসেছি। আমাদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের জন্য পাঁচ গরু কিনতে হবে। গত বছরের তুলনায় দাম এবার একটু বেশি। গত বছর যে ষাড়ের দাম ছিলো ১ লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। সেই ষাড়ের দাম এ বছর দেড় লাখের উপরে। ভাবছি আগামী হাটে এসে গরু কিনে নিয়ে যাবো।

কালিহাতী সদর এলাকা থেকে আসা রহিম বাদশা বলেন, হাটে কোরবানির গরু আর গরু। দাম বেশি। তাই বিক্রেতারা হাটে গরু আনছেন ঠিকই কিন্তু তেমন কেউ কিনছেন না।

হাটে আসা ঢাকার ব্যবসায়ী আবু সাইদ বলেন, হাটে পর্যাপ্ত গরু থাকলেও দাম কম না হওয়ায় কেউই গরু কিনছে না। কারণ এই গরু ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করা পর্যন্ত গাড়ির ভাড়া ও খাবারে আরো খরচ বেশি হবে। ঢাকার ক্রেতার অধিক দামে এই গরু কিনতে চাইবে না।

আলী আকবর হোসেন বলেন, হাটে গরু বেশি। তাই পছন্দ অনুযায়ী কোরবানির পশুটি কিনতে পারবো। তবে তুলনামূলক দাম বেশি হওয়ায় বিপাকে পড়েছি। এইখান থেকে গরু কিনে ঢাকার বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে হবে।

ভুঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের রুহুলীপাড়া এলাকা থেকে গরু বিক্রি করতে আসা মোতালেব বলেন, সকালে হাটে এসেছি। দুপুর হয়ে গেল এখনো ক্রেতার দেখা পায়নি। লোকসান হলেও বিক্রি করতে হবে। তা না হলে এই ঈদে গরু বিক্রি করতে পারবো না।

গোবিন্দাসী হাটের ইজারাদার জাহিদুল ইসলাম খোকা জানান, এই হাটে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়াসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার গরু আসে। স্বাভাবিক সময়ে হাটে ৬০০ থেকে ৭০০ গরু আসলেও রোববার (৩ জুলাই) পাঁচ হাজারের বেশি গরু হাটে উঠেছিলো। কিন্তু সিলেটের সুনামগঞ্জের বন্যার কারণে ব্যাপারিরা তেমন গরু কিনছেন না। দিন শেষে প্রায় ৭০০ গরুর মতো বিক্রি হয়েছে। হাটে গরু ব্যবসায়ীদের জন্য সব ধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।