সারা বাংলা

বগুড়ার পাড়া-মহল্লায় ‘শীল-পাটা বটি ধার’

‘শীল-পাটা বটি ধার্, বটি ধার ছুরি ধার পাটা ধার’- এমন হাক-ডাকে মুখরিত বগুড়া শহরের প্রতিটি পাড়া, মহল্লা। কুরবানির ঈদ উপলক্ষে শীল-পাটা এবং পুরাতন বটি, ছুরি, কেচি ধার করে জীবন জীবিকা চালানো ব্যক্তিরা চষে বেড়াচ্ছেন শহরের প্রতিটি এলাকা। সকাল হলেই সাইকেল সাদৃশ্য কাঠের যন্ত্র কাঁধে এবং হাতে লাউডস্পিকার নিয়ে শহরের অলিগলিতে দেখা যাচ্ছে ঘুরে বেড়ানো এসব ব্যক্তিদের।

ঈদ মৌসুম তাই সারা দিন মাংস কাটার অস্ত্র এবং মসলা বাটার সামগ্রী ধার দিয়ে তাদের একেক জনের উপার্জন হয় ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এমন উপার্জন পেয়ে খুশি এই মানুষগুলো। তাই ঈদের আগের দিন পর্যন্ত থাকবেন তারা। এরপর ফিরবেন নিজ জেলায়।

আধুনিক প্রযুক্তির ছোয়ায় শহরের গৃহিণীরা এখন মসলা বাটার জন্য শীল- পাটার ব্যবহার করেন কদাচিৎ। এখনকার সকল গৃহিণী বাজারে কিনতে পাওয়া পাউডার মসলা বিশেষ করে মরিচ, জিরা, হলুদ, ধনে গুড়ো রান্নার কাজে ব্যবহার করেন। তবে আদা, রসুন, পেয়াজ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্লেন্ডারে বেটে নেন। যে কারণে শীল-পাটার ব্যবহার শহরে এখন অধিকাংশ গৃহিণী করেন না বললেই চলে। তবে ব্লেন্ডারের তুলনায় পাটায় বাটা এই মসলা রান্নাকে বেশি সুস্বাদু করে দারি অনেক গৃহিণীর। ঈদে কুরবানির পশুর মাংস সুস্বাদু রান্না করতে তারা পাটায় বাটা মসলা ব্যবহার করতে চান। যে কারণে কুরবানির এলে তাদের পাটায় ধার করানোর প্রয়োজন পড়ে। পাশাপাশি প্রয়োজন পড়ে পুরনো বটি, ছুরি, দা-য়ে ধার দেওয়ার। তাই এই সময় এই পেশার মানুষদের কদর বেড়ে যায়। পুরো বছর এই পেশার মানুষগুলো এই সময়ের অপেক্ষায় থাকেন।

শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায় পাটায় ধার কাটছিলেন খালেদ মিয়া। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, গত দেড় মাস আগে তিনি হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা থেকে বগুড়ায় এসেছেন। শুধু তিনি নন, তার মতো আরও ১৫ জন এসেছেন একই এলাকা থেকে শীল-পাটায়, বটি, ছুরিতে ধার দিতে। 

খালেদ মিয়া তার বাবা দুদু মিয়ার কাছে শীল-পাটায় ধার কাটতে শিখেছেন। তবে ১৮ বছর এ পেশায় থাকলেও পুরোপুরি তিনি এটির উপর নির্ভরশীল নন। শুধু কুরবানির ঈদ এবং বর্ষাকালে তিনি হাতুড়ি, বাটাল এবং শান আটকানো কাঠের এই যন্ত্র নিয়ে উপার্জনে বের হন। বাকি সময় তিনি কৃষিকাজ এবং নিজ জেলায় দিনমজুরি করেন। বর্ষায় হবিগঞ্জে বন্যার কারণে তাদের কাজ থাকে না। তখন অনেকে এই পেশা বেছে নেন। 

শীল-পাটা এবং বটিতে ধার কেটে নেওয়া বিলকিস বেগম বলেন, ‘বটি দুটো কেনার পর ১ বছরের বেশি হলো কখনো ধার করানো হয়নি। এছাড়াও পাটাতে কবে ধার কেটে নিয়েছি মনে নেই। লোকটির ডাক শুনতে পেয়ে তাকে ডেকে থামিয়ে বটিগুলো আর শীল-পাটায় ধার কেটে নিলাম। ঈদে মাংস কাটতে হবে। মসলা তো আগেই বাটতে হবে।’ 

কুরবান আলী নামের আরেক শ্রমিক জানান, সকাল থেকে দুপুর ৩টা নাগাদ তিনি উপার্জন করেছেন ৭০০ টাকা। সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি ঘুরবেন। আরও কিছু টাকা কামাই হবে। 

কুরবান আলী বলেন, শীল-পাটায় ধার কাটতে পাটার সাইজ বিবেচনা করে তিনি ১০০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত নেন। এ ছাড়া বটি ৩০-৪০ টাকা, ছুরি ২০ টাকা এবং কেচি ধার করে ৩০ টাকা পান তিনি। দেড় মাসের মধ্যে গত ১৫ দিনে তার বেশি টাকা উপার্জন হয়েছে। প্রতিদিন ৮০০ থেকে হাজার টাকা উপার্জন হওয়ায় খুশি তিনি।