সারা বাংলা

ইউপি কার্যালয়ে সৌদি দূতাবাসের কার্যক্রম, আটক ৩

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয়ে ফিঙ্গার প্রিন্টের নামে সৌদি আরব যেতে ইচ্ছুক নারীদের সঙ্গে প্রতারণা করছিল একটি চক্র। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে আটক করেছে।

রোববার (৭ আগস্ট) আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আটককৃতরা হলেন- নির্বাচন কমিশনের ভোটার হালনাগাদ প্রজেক্টের কম্পিউটার অপারেটর বানিয়াচং উপজেলার জমশেদ মিয়া, সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার ইকড়ছই গ্রামের আবু সুফিয়ান ও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ফাহিম চৌধুরী।

নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ডালিম আহমেদ বলেন, ‘প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সৌদি যেতে আগ্রহী বিভিন্ন এলাকার নারীদের কাছ থেকে একটি সংঘবদ্ধ চক্র জনপ্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে নিয়েছে। পরে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন এবং সৌদি যাওয়ার জন্য আঙুলের ছাপ দেওয়ার জন্য নবীগঞ্জের বাউসা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যায়। তাদের সুবিধার্থে সৌদি দূতাবাস এখানেই আঙুলের ছাপ নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে বলেও জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ শনিবার সন্ধ্যায় তাদের আটক করে। রোববার তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম জানান, বিভিন্নস্থানে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম চলছে। সে হিসাবে নবীগঞ্জেও এ কার্যক্রম চলমান আছে। এখন ভোটার হলে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নতুন ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর মোবাইল ফোনে ম্যাসেজের মাধ্যমে চলে আসে। তখন তারা কার্ডটি প্রিন্ট দিয়ে নিতে পারেন।

সেই সুযোগ নিচ্ছিলেন পার্শ্ববর্তী সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার কয়েকজন নারী। তারা নিজেদের এলাকায় কার্ড করতে পারছিলেন না। তাই তারা এখানে চলে এসেছেন। যদিও এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নতুন ভোটার হতে এখন অনেক কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও প্রত্যয়ন প্রয়োজন হয়।

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে এমন ৭০-৮০ জনকে আমরা শনাক্ত করেছি। তাদের প্রত্যেকের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। ভোটার হালনাগাদ সংশ্লিষ্ট যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বাউসা ইউপি চেয়ারম্যান হাজী শেখ সাদিকুর রহমান শিশু বলেন, ‘সুনামগঞ্জ, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে তথ্য গোপন করে বাউসা ইউনিয়নে ভোটার করার জন্য কয়েকজন দালাল ও ভোটার তালিকা হালনাগাদের টিম লিডার জমশেদের যোগসাজশে আমার ইউনিয়নে নিয়ে আসা হয়। আঙুলের ছাপ দেওয়ার সময় গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় মানুষ অপরিচিত দেখে তাদেরকে আটক করে থানায় দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তাদের জন্মনিবন্ধন নেই, মেম্বারের প্রত্যয়ন নেই। কোনও কাগজ নেই। বিদেশে পাঠাতে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার নাম করে একেক জনের কাছ থেকে তারা ১০-১৫ হাজার টাকা করে নিয়েছে।’

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে বাউসা ইউনিয়নে নতুন ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয়। শনিবারও নতুন ভোটার হওয়ার ফরমে ঠিকানা, জন্মনিবন্ধনসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আঙুলের ছাপ দিচ্ছিলেন স্থানীয় নতুন ভোটাররা। এ সময় নির্বাচন কমিশনের ভোটার হালনাগাদ প্রজেক্টের কম্পিউটার অপারেটর জমশেদ মিয়া নতুন ভোটার হওয়ার ফরমে ঠিকানা, জন্মনিবন্ধন নম্বরের তথ্য অপূর্ণ রেখেই সুনামগঞ্জের সুলতানা আক্তার সুমী নামে এক নারীর আঙুলের ছাপ নেন। এতেই বিপত্তি ঘটে।

এ সময় বেশ কয়েকজনকে স্থানীয়দের অপরিচিত মনে হলে তারা তাদের আটক করেন। বিষয়টি নবীগঞ্জ থানায় অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জমশেদ মিয়া, আবু সুফিয়ান ও ফাহিম চৌধুরীকে আটক করে। পুলিশ ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বললে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে।

সুনামগঞ্জের সুলতানা আক্তার সুমী ও নেত্রকোণার ফাহিমা আক্তার বলেন, তারা আমাদের কাছ থেকে সৌদি পাঠানোর জন্য ১৫ হাজার টাকা করে নিয়েছে। বলেছে শনিবার আঙুলের ছাপ দিতে হবে। এ জন্য তারা আমাদের এ ইউনিয়ন অফিসে (বাউসা ইউপি কার্যালয়) নিয়ে আসে। কেউ কেউ আঙুলের ছাপ দিয়েছেন। আবার ঝামেলার কারণে কারও দেওয়া সম্ভব হয়নি।