সারা বাংলা

চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণ: যেভাবে গ্রেপ্তার হয় নুরনবী

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার দুর্গম এলাকায় নুরনবীর (২৬) বাড়ি। ওই বাড়িতে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। কর্দমাক্ত জমি পেরিয়ে যেতে হয় সেখানে। শুক্রবার (৫ আগস্ট) ভোরের আলো ফোটার আগেই পুলিশ বাড়িটি ঘিরে ফেলে। পুলিশের ডাকে প্রথমে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন নুরনবীর বাবা বাহেজ উদ্দিন ও মা জরিনা বেগম।

পুলিশের কাছে তারা জানতে চান, কেন তাদের ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হবে। এসময় তারা তাদের এক আইনজীবী আত্মীয়ের সঙ্গে পুলিশকে কথা বলিয়ে দেন। বাইরে যখন এসব কথাবার্তা চলছিল, তখন নুরনবী দা দিয়ে ঘরের ভেতরে সিঁধ কাটছিলেন পেছন দিয়ে বের হয়ে পালানোর জন্য। ঠিক সে সময় পুলিশের কয়েকজন সদস্য ঘরে ঢুকে নুরনবীকে ধরে ফেলেন।

এর আগে, চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে কালিয়াকৈর থেকে আওয়াল নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) ভোরে টাঙ্গাইল থেকে গ্রেপ্তার হওয়া রাজা মিয়ার কাছ থেকে পুলিশ আওয়াল ও নুরনবীর নাম জানতে পারে।

গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রথমে আওয়ালের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। তাকে গ্রেপ্তারের পর নুরনবীর অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু নুরনবী কোথায় থাকে তা জানাতে ব্যর্থ হন আওয়াল।

এসময় গোয়েন্দা দল কালিয়াকৈরে তাদের এক সোর্সকে ডেকে আনেন। আওয়ালের কাছে নুরনবীর চেহারার বর্ণনা শুনে চিনে ফেলেন ওই সোর্স। পরে চন্দ্রা এলাকা থেকে সোর্সকে নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল রওনা হন নুরনবীর বাড়ির উদ্দেশ্যে। সোহাগ পল্লী এলাকায় গাড়ি রেখে প্রায় আধা ঘণ্টা পায়ে হেঁটে নুরনবীর বাড়িতে পৌঁছান তারা।

অভিযানে অংশ নেওয়া গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আহসানুজ্জামান বলেন, ‘লাল মাটির কাঁদা পথ পাড়ি দিয়ে নুরনবীদের বাড়ি যেতে হয়। সরকারি খাস জমিতে ঘর তুলে বসবাস করেন তারা। আশপাশে কোনো ঘর-বাড়ি নেই। প্রায় ১৫ থেকে ১৬ বছর আগে কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে নুরনবীর বাবা-মা এখানে এসে বসবাস শুরু করেন।’

নুরনবীর ঘর থেকে বাস ডাকাতির সময় লুণ্ঠিত একটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। এর আগে, নুরনবীর নামে ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা এবং একটি ছিনতাই মামলা রয়েছে।

আওয়াল পুলিশকে বলেন, ‘সমস্যা হতে পারে তাই নিজ বাড়িতে না থেকে শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করছিলাম।’ নুরনবী বলেন, ‘দুর্গম এলাকা হওয়াতে আমার বাড়ি সহজে কেউ খুঁজে পাবে না। এমন চিন্তা থেকেই নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিলাম।’

গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতরা জানায়, বুধবার (৩ আগস্ট) ভোরে ডাকাতি শেষে তারা মধুপুর উপজেলায় তাদের এক সঙ্গীর আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান নেন। সকাল হওয়ার পর সবাই ওই বাড়ি থেকে যার যার গন্তব্যে চলে যান।

পুলিশ বলছে, চলন্ত বাসে ডাকাতিতে মোট ১১ জন অংশ নেয়। এদের মধ্যে, তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। ডাকাতিতে অংশ নেওয়াদের মধ্যে কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক, বাকিরা পোশাক কারখানার শ্রমিক।