সারা বাংলা

শ্রমিক ধর্মঘটে চা বাগানে বড় ক্ষতির আশঙ্কা

হবিগঞ্জে শ্রমিক ধর্মঘটে বাগানগুলোর ফ্যাক্টরিতে চা পাতা নষ্ট হচ্ছে। এতে কোটি টাকার উপরে ক্ষতির মুখে পড়েছে বাগানগুলো।

বর্তমানে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা। এ টাকায় তাদের জীবন জীবিকা চলছে না। কারণ সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্য। এ কারণে শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা দাবি করেন। এ দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামেন তারা।

মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) থেকে বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে সব বাগানে কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি বিক্ষোভ সমাবেশেরও আয়োজন করা হয়। তাতেও দাবি আদায় না হওয়ায় শনিবার (১৩ আগস্ট) সকাল থেকে শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করেন। এ কারণে জেলার বিভিন্ন বাগানের ফ্যাক্টরিতে চা পাতা পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া ভরা মৌসুমে গাছ থেকে চা পাতা উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।

দুপুরে জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি চা বাগানের ফ্যাক্টরিতে গিয়ে দেখা গেছে, উত্তোলন করা চা পাতা পড়ে আছে। এভাবে থাকায় পাতাগুলো নষ্ট হচ্ছে। 

চা সংসদের আহ্বায়ক তাহসিন আহমেদ বলেন, চা শ্রমিকদের আন্দোলনে চা উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চা শ্রমিকদের সঙ্গে বাগান কর্তৃপক্ষের ঝামেলা নেই। অথচ তারা আন্দোলন করছেন। 

তিনি জানান, শ্রমিকদের দাবি নিয়ে আলোচনা চলমান থাকাকালীন তারা হঠাৎ করে এ কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন, সেটা অবৈধ কর্মবিরতি, যা শ্রম আইনের পরিপন্থি। 

এদিকে চা-শিল্পে উৎপাদন ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে শ্রমিকদের আইনবহির্ভূত কর্মবিরতি অবিলম্বে প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান শ্রম মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) খালেদ মামুন চৌধুরী। দ্রুততম সময়ে চলমান বিরোধ পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান ও চা-শিল্পে স্বাভাবিক উৎপাদনের পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।

জেলার চুনারুঘাট উপজেলার চানপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. শামীম হুদা বলেন, হঠাৎ করে কর্মবিরতি দিয়ে চা উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এখন চা মৌসুমের মূল সময়। যেখানে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কেজি পাতা তোলা হতো, এখন তা কমে প্রায় ২০ হাজার কেজিতে চলে এসেছে। অনির্দিষ্টাকালের কর্মবিরতিতে এখন উৎপাদন শূন্য। যথাসময়ে পাতা উত্তোলন না করলে চায়ের গুণগত মানও হ্রাস পাবে।

চা বাগান সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, হবিগঞ্জের চা বাগানগুলোতে অতিবৃষ্টির পর এবার প্রচন্ড গরমের প্রভাবে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পোকা-মাকড়ের আক্রমণে অধিকাংশ বাগানের বেহালদশা। তা ছাড়া চলমান লোডশেডিংয়ের কারণেও উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। উৎপাদন খরচ আর বিক্রয়মূল্যে অনেক চা বাগান এখন লোকসানে রয়েছে। এমন সময়ে শ্রমিকদের ধর্মঘট চা বাগানশিল্পের জন্য অশনিসংকেত। ফলে এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা দেখছেন না বাগান সংশ্লিষ্টরা।

চা বাগান সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, চুনারুঘাট, মাধবপুর উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজার ৭০৩.২৪ হেক্টর জমিতে ২৫টি ফ্যাক্টরিযুক্ত চা বাগান রয়েছে। এ ছাড়া ফাঁড়িসহ প্রায় ৪১টি বাগানের প্রায় প্রতি হেক্টর জমিতে ২২শত-২৫শত কেজি চা পাতা উৎপাদন হয়। এসব বাগানে বছরে ১ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়ে থাকে।