সারা বাংলা

মানিকগঞ্জ হাসপাতাল: উদ্বোধন হলেও চালু হয়নি কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট

কিডনির জটিলতায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় মানিকগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ইউনিট উদ্বোধন করা হয় চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি। তবে উদ্বোধনের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা যায়নি সেখানে। এতে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার অসংখ্য কিডনি রোগী। অনেক রোগীকে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ঢাকায় গিয়ে ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে।

শনিবার (১৩ আগস্ট) নবজাতক শিশুদের চিকিৎসায় স্ক্যানু ইউনিট উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবার প্রতিষ্ঠান বাড়ায় জনবলের প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি নির্দেশনা দিয়েছেন নতুন জনবল-কাঠামো তৈরি করে জনবল নিয়োগ দেওয়ার জন্য। করোনার মধ্যে ১৫ হাজার চিকিৎসক ও ২০ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

মানিকগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কোনো কারণে কিডনি নষ্ট হলে কিডনির পরিবর্তে কৃত্রিম ছাঁকনি ব্যবহার করে তার মধ্যে দিয়ে শরীরে প্রবাহিত সমস্ত রক্ত ছেঁকে শরীর থেকে বর্জ্য বের করে দেওয়াকে চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা হয় ডায়ালাইসিস। যে কৃত্রিম ছাঁকনি দিয়ে এ ছাঁকন প্রক্রিয়া করা হয় তাকে ডায়ালাইজার বলা হয়।

জেলায় কিডনির জটিলতায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে জেলা সদরের হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপন করা হয়। গত ১৫ জানুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ডায়ালাইসিস ইউনিটটি উদ্বোধন করেন। 

মানিকগঞ্জ জেলা সদরের এই হাসপাতালে চারটি ডায়ালাইজার যন্ত্রসহ একটি পূর্ণাঙ্গ ডায়ালাইসিস ইউনিটে রয়েছে। তবে জনবল নিয়োগ না হওয়ায় কিডনি রোগীদের চিকিৎসা সেবার এই গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।

মানিকগঞ্জ জেলার কয়েকজন কিডনি রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারাদেশের মতো মানিকগঞ্জেও কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে; সঙ্গে বাড়ছে জীবন রক্ষার জন্য জরুরি ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন। সাত মাস ধরে হাসপাতালে মূল্যবান ডায়ালাইজার যন্ত্র অচল পড়ে আছে। শুধু জনবল না থাকায় কিডনি রোগীরা এই জরুরি চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। মূল্যমান যন্ত্রপাতি অচল পড়ে থাকায় সেগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমিও কিডনির জটিল রোগে ভুগছি। প্রতি সপ্তাহে তিন দিন প্রায় আট হাজার টাকা খরচ করে আমাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে হয়। সরকারি এই হাসপাতালটিতে ডায়ালাইসিস না হওয়ায় অনেক দরিদ্র রোগীদের অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে এমনকি ঢাকায় গিয়ে ডায়ালাইসিস করাতে হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জনবল নিয়োগের মাধ্যমে ডায়ালাইসিস রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালটির এক চিকিৎসক বলেন, ডায়ালাইসিসের জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলোর মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে। ডায়ালাইসিস ইউনিটের যন্ত্রপাতি ও কক্ষ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে হয়। এতে বিপুল বিদ্যুৎ খরচ হয়।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, ‘নেফ্রোলজিস্ট এবং প্রশিক্ষিত নার্স না থাকার কারণে ডায়ালাইসিস ইউনিটটি চালু করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে জনবল নিয়োগ চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও আবেদনে সুপারিশ করেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ডায়ালাইসিস কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’