সারা বাংলা

পঞ্চগড়ে সারের জন্য দীর্ঘ লাইন, ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই

আমনের ভরা মৌসুমে সার সঙ্কটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পঞ্চগড়ের কৃষকেরা। খুচরা বাজারে সার পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত দাম হওয়ায় ডিলারের দারস্থ হচ্ছেন তারা। কিন্তু সেখানেও প্রত্যাশিত সার না থাকায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। কৃষকদের ভাষ্য, প্রয়োজন মতো সার না পাওয়া গেলে এবার আমন আবাদে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, সরকার নির্ধারিত দামে সার বিতরণ করছেন ডিলার। সার পেতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন কয়েক শ’ মানুষ। 

সেখানে সারের বরাদ্দ ছিল পটাশ ৮৪ বস্তা, টিএসপি ১১০ বস্তা এবং ইউরিয়া ১১০ বস্তা। প্রতিজন কৃষককে দেওয়া হবে এক বস্তা করে পটাশ, টিএসপি ও ইউরিয়া সার। সে হিসেবে ৮৪ জন কৃষক পাবেন পটাশ, টিএসপি ও ইউরিয়া সার এবং ২৬ জন পাবেন শুধু টিএসপি ও ইউরিয়া সার। ফলে দীর্ঘক্ষণ লাইনে থাকা অনেককেই সার ছাড়াই ফিরতে হচ্ছে। 

এদিকে, সার নিতে আসা চাষিদের উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে করা হয়েছে পুলিশ মোতায়েন। একই অবস্থা অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতেও।

পঞ্চগড়ে ৫০ কেজির এক বস্তা ইউরিয়া সার ডিলারের কাছ থেকে সংগ্রহ করা যায় ১ হাজার ১০০ টাকায়, খোলাবাজারে যা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে। একইভাবে এমওপি সারের বস্তা সরকার নির্ধারিত মূল্য ৭৫০ টাকা হলেও খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। টিএসপি সার ডিলার বিক্রি করছেন ১ হাজার ১০০ টাকা দরে। এই সারটি আবার খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা। ডিএপি সার ডিলারের কাছে পাওয়া যায় ৮০০ টাকায়, খোলাবাজারে যা কিনতে ‍কৃষককে গুণতে হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত।

সার নিতে আসা খবিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমন ধান রোপণের পরে এখনো জমিতে সার দেইনি। সারের এমন সংকট হবে কল্পনা করিনি। লাইনে দাঁড়িয়ে খুব কষ্ট করে সার নিতে হচ্ছে। তাও আবার এক বস্তার বেশি দিচ্ছে না ডিলাররা।’ 

ময়নুল ইসলাম নামে অপর একজন বলেন, ‘সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও সার পাইনি। সার নিতে এসে কাড়াকাড়ি অবস্থা। ধাক্কাধাক্কিও হচ্ছে। এভাবে আমাদের পক্ষে আমন আবাদ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’ কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, পঞ্চগড়   জেলায় আগস্ট মাসে ৮ হাজার ৬৯০ টনের বিপরীতে ৪ হাজার ৯৯৭ টন ইউরিয়া, ৪ হাজার ৩১৩ টনের বিপরীতে ৮৯৩ টন এমওপি, ২ হাজার ৫৬২ টনের বিপরীতে ৭৬৫ টন টিএসপি এবং ২ হাজার ২৩০ টনের বিপরীতে ৬৭৯ টন ডিএসপি সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে চাহিদার তুলনায় সার বরাদ্দ নেই বললেই চলে। 

পঞ্চগড় বিএডিসির সার ডিলার এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, ‘চাহিদা মতো সার পাওয়া যাচ্ছে না। যে পরিমাণ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি চাহিদা রয়েছে। ফলে সার বিক্রি করতে হিমশিম পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।’ 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শাহ মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে এমওপি সারের কিছুটা সংকট রয়েছে। এরই মধ্যে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করছি দ্রুতই সার সংকট কেটে যাবে।’