সারা বাংলা

পঞ্চগড়ের চা শ্রমিকদের সর্বনিম্ন আয় ৩০০ টাকা

সিলেট অঞ্চলের চা শ্রমিকেরা যখন দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৩০০ টাকা করার দাবিতে আন্দোলন করছেন, তখন পঞ্চগড়ের সমতলের চা বাগানের শ্রমিকরা চুক্তিভিত্তিক কাজ করে সর্বনিম্ন আয় করছেন দিনে ৩০০ টাকা। এমনকি অনেক শ্রমিক দিনে ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন।

জেলার বাগান মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এতথ্য জানা গেছে।

পঞ্চগড়ের বিভিন্ন চা বাগান ঘুরে দেখা যায়, এখন পাতা সংগ্রহের ভরা মৌসুম চলছে। বাগান থেকে কাঁচা চা পাতা সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী ও পুরুষ শ্রমিকেরা। কাস্তে দিয়ে কেটে পাতা সংগ্রহ করেন অধিকাংশ শ্রমিক। তারা কাঁচা চা পাতা উত্তোলনের কাজ করছেন চুক্তিভিত্তিকভাবে। 

সদর উপজেলার হড়িভাসা ইউনিয়নের এলাকার এমএম টি স্টেটের বাগানে কাজ করা শ্রমিকরা জানান, প্রতি কেজি কাঁচা পাতা উত্তোলনের বিনিময়ে তারা ৩ টাকা করে পান। একজন নারী শ্রমিক সারাদিনে দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ কেজি পাতা উত্তোলন করতে পারেন। পুরুষ শ্রমিকরা পারেন ১৫০ কেজি থেকে ২৫০ কেজি পর্যন্ত। এতে তাদের আয় হয় ৩০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা। 

এমএম টি স্টেটের চা শ্রমিক জবেদা বেগম বলেন, ‘বাগানে পাতা বড় থাকলে ২০০ কেজি পর্যন্ত তোলা যায়। এতে আয়ও হয় বেশি।’ 

রাবেয়া বেগম নামে অপর এক শ্রমিক বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বাগানে কাজ করি। এতে ৩০০-৪০০ টাকা পাই।’

মমিনা বেগম নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা চুক্তিভিত্তিক কাজ করি। আয় রোজগার ভালোই হয়। কিন্তু জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বাগানে পাতা থাকে না তখন দৈনিক ১৪০ টাকা করে পাই।‘

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো বক্তব্য দিকে রাজি হয়নি এমএম টি স্টেট কর্তৃপক্ষ।

হাড়িভাসা এলাকার ছোট একটি চা বাগানের মালিক আল আমিন বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলের শ্রমিকদের দাবির চেয়েও ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি আয় করেন এখানকার শ্রমিকরা। অথচ আমাদের এখানকার চায়ের ডিমান্ড অনেক কম। এমনকি দামের দিক থেকে সিলেটের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। সিলেটের বাগান মালিকরা যে মূল্যে চা পাতা বিক্রি করে আমরা পঞ্চগড়ের বাগান মালিকরা তার অর্ধেকও পাইনা।’

পঞ্চগড় চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড়সহ পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলায় ১০ হাজার ২০০ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এই অঞ্চলে রেকর্ড ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার কেজি সবুজ চা পাতা থেকে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়। 

পঞ্চগড় চা বোর্ডের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের শ্রমিকেরা স্থায়ী। মজুরি ছাড়াও তারা রেশন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। পঞ্চগড়সহ উত্তরের চা বাগানগুলোতে শ্রমিকেরা অস্থায়ীভাবে কাজ করেন। পঞ্চগড় জেলার বাগানগুলোতে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। যার অর্ধেকই নারী শ্রমিক। নারী শ্রমিকেরা সরকারের বিভিন্ন সামাজিক সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

তিনি আরো জানান, এখানকার শ্রমিকরা চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। ফলে প্রতিকেজি চা উত্তোলন করে তারা ভালো মজুরি পান।