খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, পানি দূষণ এবং মাছের কাঙ্খিত দাম না পাওয়াসহ নানা সংকটে জর্জরিত চাঁদপুরের ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ প্রকল্পের চাষিরা। ফলে লোকসানের আশঙ্কায় অনেকেই নিজেদের খাঁচা বন্ধ করে দিয়েছেন।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) সরজমিনে শহরের পুরানবাজার, নতুনবাজার, রঘুনাথপুরের খাঁচায় মাছচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০২ সালে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি শুরু হয়। তবে অন্য সব পদ্ধতির তুলনায় ভাসমান পদ্ধতিতে খাঁচায় মাছ চাষ অনেকটা লাভজনক ও সাশ্রয়ী। আর তাই ডাকাতিয়ার নদীর পাশাপাশি জেলার পদ্মা, মেঘনা ও ধনাগোদা নদীতেও খাঁচায় ভাসমান অবস্থায় মাছ চাষির সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিন্তু মাছের খাদ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়া, কারখানার দূষিত বর্জ্য নদীতে মেশা এবং কচুরিপানা বৃদ্ধি পাওয়ায় খাঁচার মাছ মারা যেতে শুরু করে। এছাড়া চাষ করা মাছের ন্যায্য দাম বাজারে না পাওয়ায় দিন দিনই আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। এতে করে গত এক বছরে প্রায় শতাধিক খাঁচা বন্ধ হয়ে গেছে।
শহরের রঘুনাথপুরের খাঁচায় মাছচাষি আলমগীর বলেন, ‘আমি ডাকাতিয়া নদীতে ৪০০ খাঁচায় তেলাপিয়া চাষ শুরু করি। ২০১৯ সালের পর নানা সংকটে আমার এখন ১০০ খাঁচা আছে। তাই সরকার যদি সহযোগিতা না করে তাহলে আমাদের খাঁচায় মাছ চাষ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।’
অপর মাছ চাষি আরিফ বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর খাদ্যের দাম বস্তায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। সে তুলনায় মাছের দাম বাড়ে নাই। আমরা কোনো রকম টিকে আছি। এখন খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে না আসলে আমাদের এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না।’
আরো কয়েকজন মাছ চাষি বলেন, বিভিন্ন কল-কারখানার ময়লা নদীর পানিকে দূষিত করছে। ডাকাতিয়া নদীর খাঁচায় অনেক মাছ মারা যায়। আমরা মৎস্য কর্মকর্তাকে বলেও পরিদর্শনে আনতে পারি না। তাই এ চাষকে টিকাতে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা কামনা করছি।
মারা যাওয়া মাছ
চাঁদপুর জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, খাঁচায় মাছ চাষ চাঁদপুরে বেশ জনপ্রিয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মাত্র ৫৭৮ জন খাঁচায় মাছ চাষি ছিলো এ জেলায়। তখন মাছের উৎপাদন ছিলো ২২৭ মেট্রিক টন। আর খাঁচার মোট আয়তন ছিলো ১০ হাজার ৭৩৯ ঘনমিটার। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরে খাঁচায় মাছ চাষি বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৪৪০ জন। যেখানে মাছের উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৪ মেট্রিক টন। খাঁচার মোট আয়তন ৪৫ হাজার ৩৩৫ ঘনমিটার। তবে খাঁচার দৈর্ঘ ১৮.৫৮ ঘণমিটার অপরিবর্তিত রয়েছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, ‘খাঁচার মাছ খুব সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা বাড়ছে। তবে খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও অন্যান্য কিছু বিষয় নিয়ে চাষিরা কষ্টে আছেন। আমরা সরকার কাছে আবেদন করেছি কৃষির মতো মাছের খাদ্যের দামেও যাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। পাশাপাশি রাষ্ট্রের প্রাইভেট ও পাবলিক ব্যাংকগুলো থেকেও যাতে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হয় সে অনুরোধও জানিয়েছি। জনবল সংকট থাকা সত্ত্বেও আমরা ঘুরে ঘুরে মাছ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আসছি।’