সারা বাংলা

‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে’

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী প্রথম থেকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছেন। মিয়ানমার প্রাকৃতিক সমৃদ্ধশালী দেশ হলেও জান্তা সরকারের বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য তারা বারবার আলোচিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলনকে বেগমান করতে হবে।’

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম-এর উদ্যোগে ‘শেখ হাসিনার বৈশ্বিক ভাবমূর্তি: প্রসঙ্গ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন’ শীর্ষক এক সেমিনার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠিত সেমিনারে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

রাজশাহীর সিটি মেয়র  বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে আশ্রয় দিচ্ছেন। কতদিন তাদের ভরণ-পোষণ দেওয়া যাবে— এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মিয়ানমার এত বড় অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলনকে বেগমান করতে হবে। প্রতিনিয়ত এই কাজকে বেগমান করতে হবে।’

তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশের কোনও অংশ দখল করার কোনও ইচ্ছা আমাদের নেই। মিয়ানমার বারবার আমাদের উসকানি দিচ্ছে। তারা আমাদের দেশের ওপর গোলা ছুড়ছে। কিন্তু আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই। বিজিবিকে সবল করা হচ্ছে, কিন্তু আমরা আগ্রাসন মনোভাব দেখাচ্ছি না। বাংলাদেশের সীমান্তে অনেক রোহিঙ্গা বসবাস করছে।’

তিনি গাম্বিয়ার পাশে দাঁড়ানোর কথা তুলে ধরে বলেন, ‘গাম্বিয়া আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মানবতার পরিচয় দিয়েছে। পরাশক্তিশালী দেশগুলোর কথা ও কাজের মিল পাওয়া যায় না। তারা মুখে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চাইলেও মন থেকে প্রত্যাবাসন চায় না।’

এসময় তিনি মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচারকারীদের দ্রুত বিচারের দাবি করেন ও সুষ্ঠু সমাধান চান। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে পরীক্ষিত বন্ধু রাষ্ট্রদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া আন্তর্জাতিক সমস্যা। যারা বাংলাদেশে আটকা পড়ে গেছে আমরা চাই— তারা নিজ দেশে ফিরে যাক।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কলামিস্ট তৈরি করতে চাই। এই উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’ এসময় তিনি সবাইকে কলাম লেখার জন্য আহ্বান করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহ্ আজম বলেন, ‘বর্তমানে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে নানান অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে একটা সংকট তৈরি হচ্ছে এবং আমাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।’

তিনি  বলেন, ‘এটা আসলে আন্তর্জাতিক সমস্যা। তাই এটাকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। মিয়ানমারে যে বৈষম্যমূলক আইন আছে, সেই আইন বিলুপ্ত করার জন্য জনমত সৃষ্টি করে বিলুপ্ত করতে হবে। এজন্য বাইরের দেশ থেকে প্রতিনিয়ত চাপ প্রয়োগ করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বর্তমানে রোহিঙ্গা সমস্যা অন্যতম। এ ধরনের সমস্যাগুলো বিশ্বের মানুষের কাছে জানানো দরকার।  ইয়াবা পাচারকারী দেশ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের শেখার কিছু নাই। বাংলাদেশকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতারা আশ্বাস দিয়ে এসেছেন, কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সব আশ্বাস বাস্তবায়ন করে চলেছেন।’

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক  অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক ও কলাম লেখক ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দীন, এনডিসি।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন— নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী।