সারা বাংলা

বেংরি দিয়ে বাইন মাছ শিকার 

‘মৎস্য মারিব, খাইব সুখে’— প্রাচীন বাংলায় লোকমুখে বহুল প্রচলিত প্রবাদ। মাছ নিয়ে বাঙালির মনে আছে আবেগ। একজন বাঙালি পৃথিবীর যেখানে থাকুক না কেন, মাছ তার পছন্দের তালিকায় থাকবেই। তা বলা হয়, মাছে-ভাতে বাঙালি।

মাছ শিকার বাঙালির জীবনে পরিচিত বিষয়। গ্রামাঞ্চলে জলাশয় বা বিলে নানা সরঞ্জাম দিয়ে বা সরঞ্জাম ছাড়াও মাছ ধরতে দেখা যায়।

জলাশয়ে লম্বা সুতার টানাবড়শি বা ছিপে বড়শির ব্যবহার, গ্রামের ধানক্ষেতে ও বিলে অনেকগুলো বড়শিসহ দীর্ঘ সুতা ভাসিয়ে রাখা পরিচিত দৃশ্য। বড়শি দিয়ে মাছ শিকারে মাছকে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম টোপ দিয়ে আকৃষ্ট করা হয় অথবা চারা ফেলে প্রলুব্ধ করা হয়।

তবে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট ও শায়েস্তাগঞ্জে সুতাং নদীতে বাঁশের ছিপের আগায় বিশেষ ধরণের বড়শি গালিয়ে বাইন মাছ শিকার করা হয়। সরেজমিন দেখা গেছে, স্থানীয়রা নদীতে নেমে ওই বড়শি পানির কাঁদামাটিতে টানছেন। কিছুক্ষণ পর পর তাদের বড়শিতে শিকার হচ্ছে বাইন মাছ।

আলাপকালে এক মাছ শিকারি জানান, জাল ফেলে বাইন মাছ শিকার করা কঠিন। এখানে এ মাছ বড়শি দিয়ে শিকার করা যাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে এ বড়শি বেংরি, বেংরা বা বেওয়া নামে পরিচিত। এ বড়শি তারা কামারের কাছ থেকে তৈরি করেছেন। নদীর তলদেশে কাঁদামাটিতে ওই বড়শি দিয়ে বাইন মাছ শিকার করা সহজ। দৈনিক একজন শিকারি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার বাইন মাছ শিকার করতে পারেন।

অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে সুতাং নদীর উৎপত্তি। জেলার চুনারুঘাট উপজেলার ওপর দিয়ে বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করেছে নদীটি। পরে শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে লাখাই উপজেলার ওপর দিয়ে মেঘনা নদীতে গিয়ে মিশেছে সেটি।

অলিপুর শিল্প এলাকা থেকে বয়ে গেছে শৈলজুড়া ভাটি খাল। অলিপুর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার অতিক্রম করে এ খালের সংযোগ হয়েছে গোড়াবই গ্রামে সুতাং নদীতে। ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন শিল্প কারখানার বিষাক্ত কালো পানি এ খাল দিয়ে সুতাং নদীতে প্রবেশ করছে। এ নদী থেকে দূষিত পানি প্রবেশ করছে হাওড়সহ প্রাকৃতিক জলাশয়ে।

এক সময় সুতাং নদীতে বর্ষা মৌসুমে স্থানীয় লোকজন নৌকা নিয়ে দলবেঁধে মাছ ধরেছে। সেই সময়ে শুকনো মৌসুমেও প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এখন এ ধারা পাল্টে গেছে। তবে এ নদীর দক্ষিণ দিকে চুনারুঘাট ও শায়েস্তাগঞ্জের কিছু অংশে শিল্পবর্জ্য না প্রবেশ করায় এখনও নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এরমধ্যে বড়শি দিয়ে বাইন মাছ শিকার অন্যতম।