সারা বাংলা

পাবনা মানসিক হাসপাতাল: পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পাবনা মানসিক হাসপাতালের আবাসিক ভবন বসবাসের অনুপোযোগী ঘোষণা করে জেলার গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু এরপরও ঝুঁকি নিয়ে এসব ভবনে বসবাস করছেন হাসপতালের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী, আউটসোর্সিং কর্মচারী এবং বহিরাগত লোকজন। অবশেষে আগামী সাতদিনের মধ্যে এসব ভবন খালি করে দিতে বসবাসকারীদের নির্দেশ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। 

পাবনা মানসিক হাসপাতালের নতুন পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ডা. শাফকাত ওয়াহিদ যোগদান করার পর বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত নির্দেশনা বিজ্ঞপ্তি আকারে জারি করা হয়। 

গত রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে যোগ দেন শাফকাত ওয়াহিদ।

শাফকাত ওয়াহিদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২২ সালের ৩১ জুলাই গঠিত কমিটির ১১ আগস্ট দাখিলকৃত প্রতিবেদন অনুযায়ী মানসিক হাসপাতালের সরকারি বাসায় সে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সময়ে সময়ে জারিকৃত অফিস আদেশে কেয়ার টেকার হিসেবে বসবাস করছেন, সেই আদেশ বাতিল করা হয়েছে। সরকারি বাসায় যে সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং বহিরাগত বসবাস করছেন তাদের পত্র জারির সাতদিনের মধ্যে বাসা ছেড়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। অন্যথায় আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পাবনা গণপূর্ত বিভাগ পাবনা মানসিক হাসপাতালের আবাসিক কোয়াটার ও কটেজ বসবাসের অনুপোযোগী হিসেবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে চিঠি দেন জেলা প্রশাসককে। একই বছরের ২৩ জুন পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাবনা মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর থেকে পাবনা মানসিক হাসপাতালের সরকারি বাসায় কর্মকর্তা-কর্মচারী বসবাসের অনমুতি বন্ধ করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আইনগতভাবে সবকিছু বন্ধ থাকলেও হাসপতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, আউট সোর্সিং কিছু কর্মচারী ও বহিরাগত লোকজন ঝুঁকি নিয়ে সেখানে বসবাস করে আসছেন। আর এজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রতি মাসে গুনতে হয় মোটা অংকের বিদ্যুৎ বিল।

মানসিক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৬০টি পরিবার বসবাস করছে হাসপাতালের সরকারি বাসভবনে। বসবাসকারীরা হাসপাতালের অনুমোদন ছাড়া স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে এখানে বসবাস করছেন। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি হতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা রোগীর পরিবারের জন্য যে দশটি কটেজ ছিল, তার মধ্যে ৫টি ফাঁকা পড়ে আছে। বাকি ৫টির মধ্যে একটিতে হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা রয়েছেন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে। আর অন্য চারটিতে বসবাস করেন আউট সোর্সিং এ কাজ করা কর্মচারীসহ অন্যরা।

ডা. শাফকাত ওয়াহিদ বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করার পর এ অনিয়মের বিষয়টি চোখে পড়েছে। চেষ্টা করছি হাসপাতালের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে। তারই অংশ হিসেবে অনুমোদন ছাড়া সরকারি বাসায় বসবাসরতদের সাত দিনের মধ্যে বাসা ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি।’

এ বিষয়ে পাবনা মানসিক হাসপাতালের আবাসিক ভবনে বসবাসকারী সিনিয়র স্টাফ নার্স শারমিন ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা বাসা ছাড়ার নোটিশ পেয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তিন মাসের সময় চেয়েছি। আশপাশে নিরাপদে ভালো থাকার জায়গা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে এখানে থাকছিলাম।’  

অন্য সিনিয়র স্টাফ নার্স বুলবুলি খাতুন বলেন, ‘আমরা বসবাস করছি বলেই এখানকার দরজা-জানালা ঠিক আছে। তা না হলে মাদকাসক্তরা সবকিছু ভেঙ্গে নিয়ে যেত। আমরা নোটিশ পেয়েছি, তবে তিন মাসের সময় নিয়েছি।’

সিনিয়র স্টাফ নার্সের পাশাপাশি অন্য একটি ভবনে থাকেন পরিছন্ন কর্মী সঞ্জু দাস, সন্তোষ দাসসহ আউট সোর্সিং কর্মচারী ও কিছু বহিরাগত লোকজন। তারা সবাই বিনা টাকায় ভবনগুলোতে বসবাস করছেন। তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

পরিত্যক্ত ঘোষণা করা এসব ভবনে অনুমোদন ছাড়া ব্যবহার হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর মোটা অংকের বিদ্যুৎ বিল পরিশেধ করতে হচ্ছে।

বাসাগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে ডা. শাফকাত ওয়াহিদ বলেন, ‘আমি যতদূর জেনেছি, এর আগে বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করার জন্য গণপূর্তকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি সেটা খোঁজ নিতে হবে।’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত ৮ বছরে কতো টাকা বিদ্যুৎ বিল দিয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাগজপত্র দেখে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।’

পাবনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফয়সাল রহমান বলেন, ‘আমরা এখনও কোনো চিঠি পায়নি। চিঠি পেলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করা হবে।’