সারা বাংলা

নাসিরনগরে প্রতিবন্ধী ভাতা নিয়ে অনিয়ম 

এক পরিবারের ১২ জন্য সুস্থসবল ব্যক্তি। তাদের কেউ ব্যবসায়ী, কারো দোকান কিংবা গরুর খামার রয়েছে। এসবের পরও তারা নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা তুলছেন। এমন অভিনব প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নে।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাতলপাড় ইউনিয়নের ১২ জন প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে তাদের কেউ প্রকৃত পক্ষে প্রতিবন্ধী না। তাদের অধিকাংশই মৃত প্রতিবন্ধীর স্থলে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ও সমাজসেবা কার্যালয়ের জরিপে প্রতিবন্ধী তালিকায় কয়েকজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে সরকারি ভাতা পাচ্ছেন তারা। এছাড়াও ১২ জন ভাতাভোগীর মধ্যে ৪ জনের প্রতিবন্ধী কার্ড পাওয়া গেছে। তবে তারা দৃশ্যত প্রতিবন্ধী নন। 

যারা প্রতিবন্ধী ভাতা তুলছেন তারা হলেন-আনেছা বেগম, তার ছেলে জাবেদ মিয়া ও আবেদ মিয়া, দুই ছেলের স্ত্রী তানজিলা আক্তার ও জান্নাতুল ফেরদৌস, মেয়ে হালিমা বেগম, স্বজন আনাম মিয়া, বানেছা বেগম, অংরাজ মিয়া, মনোয়ারা বেগম, খুশবানু ও রহিমা বেগম।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আনেছা বেগম খুবই প্রভাবশালী। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। তিনি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সুদের ব্যবসা করে আসছেন। এলাকার অধিকাংশ মানুষ হিন্দু জেলে সম্প্রদায়ের লোক। সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এরই মধ্যে অনেকে ভিটামাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। 

উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. আবু কালাম বলেন, ‘আনেছা বেগমের পরিবারের ১২ জন সুস্থ মানুষ প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। এটা এলাকার সবাই জানেন। অথচ আমরা জনপ্রতিনিধি হয়েও প্রকৃত প্রতিবন্ধীর নাম অর্ন্তভুক্ত করতে গেলে সমাজসেবা অফিসের কর্মচারীরা হয়রানি করে। এই অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে কথা হয় আনেছা বেগমের দুই ছেলের স্ত্রী তানজিলা বেগমের ও জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বিষয়টি নিয়ে শাশুড়ি আনেছা বেগমের সাথে কথা বলতে পরামর্শ দেন তারা।   নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অভিজিৎ রায় বলেন, ‘চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখেই প্রত্যয়ন দিয়েছে। আমার হাসপাতালের কোনো চিকিৎসক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত না।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রাখেশ পাল বলেন, ‘একই পরিবারের ১০-১২ জন সুস্থ্য ব্যক্তি প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে এটা জানার পর আমি ভাতাভোগীদের বাড়িতে গিয়ে যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পেয়েছি। অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘অনিয়মের বিষয়টি প্রমাণিত। তদন্ত করে খুব দ্রুতই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’