বৃদ্ধ সুমল চন্দ্র। তার রাত কেটেছে পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীর তীরে। বসে আছেন নৌকাডুবিতে নিখোঁজ নাতির খোঁজে। এসেছেন উপজেলার পাঁচপীর এলাকা থেকে। তিনি বলেন, নাতির মরদেহটা পেলে অন্তত নিজেরা সৎকারের কাজটা করতে পারতাম।
শুধু সুমল চন্দ্র নন, তার মতো আরও অনেকে অপেক্ষায় আছেন নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে। করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ৬০ জন।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে আউলিয়ার ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ফায়ার সার্ভিস এবং ডুবুরি দলের তিনটি ইউনিট উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। সেখানে ভিড় করছেন নিখোঁজদের স্বজনেরা।
ষাটোর্ধ্ব কৃষ্ণ চন্দ্র রায় ভাই এবং ভাইপোর খোঁজে এসেছেন আউলিয়া ঘাটে। তিনি জানান, নদীর ওপর পাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া উপলক্ষে আয়োজিত ধর্ম সভায় যোগ দিতে তার ভাই নরেশ ও ভাইপো সিন্টু বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরেনি। নৌকাডুবির খবরে কাল থেকেই এখানে অপেক্ষা করছেন তিনি।
মাড়েয়া বটতলী এলাকার ধীরেন বাবুর দুই প্রতিবেশীসহ সাত নিকটাত্মীয় এখনও নিখোঁজ। কাল থেকে তিনি নদীর পাড়ে অপেক্ষা করছেন।
তিনি বলেন, বদেশ্বরী মন্দিরে যাওয়া জন্য আমার ভাতিজা, ভাতিজার বউ, ভাতিজার শ্বশুর, শ্যালিকা এবং আমার ভাতিজি নৌকায় ওঠে দুর্ঘটনায় পড়ে। এখন পর্যন্ত কারো খোঁজ পাইনি। এখন তাদের লাশের অপেক্ষা করছি।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর ওপর পাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও ধর্ম সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে যোগ দিতে সনাতন ধর্মালম্বীরা নৌকা যোগে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে ৫০ জন ধারণ ক্ষমতার নৌকাটিতে অতিরিক্ত যাত্রীর ওঠায় সেটি ডুবে যায়।
নৌকা ডুবে যাওয়ার পর তীরে সাঁতরে ওঠেন মাড়েয়া বামনপাড়া এলাকার সুবাস চন্দ্র রায়।
তিনি বলেন, আমরা ওঠার কিছুক্ষণ পরই নৌকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। এ সময় মানুষজন নৌকার মধ্যেই হুড়োহুড়ি শুরু করে। পরে যে পাশেই যাচ্ছিলাম, সেপাশেই নৌকায় পানি ঢুকছিল। আমরা পাঁচ জন বন্ধু ছিলাম। কোনোমতে সাঁতারে প্রাণে বেঁচে যাই। অন্য যাত্রীরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি করছিল। ওই মুহুর্তের কথা আসালে বর্ণনা করা সম্ভব না।
এদিকে, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্ববায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।