সারা বাংলা

ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তি: কুবিতে ফাঁকা গুলি-ককটেল বিস্ফোরণ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। শনিবার (১ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে অর্ধশতাধিক মোটরবাইকে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এসময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর প্রধান ফটক থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত মোটরসাইকেল শো-ডাউন করেন তারা। শহীদ মিনার থেকে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় হলের দিকে ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।

এছাড়া সদ্য ছাত্রলীগের বিলুপ্তি কমিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের অনুসারীদের বের হয়ে আসতে বলেন তারা। পরবর্তীতে সাবেক সাধারণ সম্পাদক (২০১৫ সালে গঠিত কমিটির) রেজা-ই-এলাহীর পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। একপর্যায়ে হলের নিচে থাকা সাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

প্রায় ২০ মিনিট ক্যাম্পাসে অবস্থান করার পর ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী ও হল প্রভোস্টরা এসে তাদের সরিয়ে নেন। পরে ইলিয়াস হোসেন সবুজের অনুসারীরা তাদের প্রতিহত করতে গেলে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন তারা। এ সময় ইলিয়াসের অনুসারীদের রামদা, হকি স্টিক ও লাঠিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র হাতে দেখা যায়। প্রধান ফটকের সামনে এসে তারা প্রক্টরের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

‘ক্যাম্পাস ও প্রধান ফটক বন্ধ থাকার পরও কীভাবে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে শোডাউন করে’ তারা জানতে চান। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, পুলিশ প্রশাসনের সামনে কীভাবে অস্ত্রসহ বহিরাগতরা শোডাউন দেয়?

এ বিষয়ে রেজা-ই-এলাহী বলেন, ‘কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিল দিয়েছি। কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার বিষয়টিকে ঘোলাটে করার জন্য তারা (ইলিয়াসের অনুসারীরা) বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্ত করার পরেও তারা বিষয়টিকে অস্বীকার করে যাচ্ছে। আর ক্যাম্পাসের যে কেউই আমার নামে স্লোগান দিতে পারে। সব জায়গায় আমার অনুসারী আছে।’

ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালের কালরাত্রি ছাড়া হলের ভিতরে ঢুকে গুলি করা, ককটেল মারা, পুলিশ এবং প্রক্টরের সামনে দিয়ে ক্যাম্পাস গেইট অতিক্রম করে হলের (বঙ্গবন্ধু) দু’তলায় উঠে যাওয়া, প্রক্টরের পাশেই ককটেল ফোটানো, এটি বিরল ঘটনা হয়ে থাকবে। এখানে তিন-চারজন সাবেক ছাত্র এবং একজন রানিং ছাত্র, অটোচালক, বহিরাগত ও বিভিন্ন মামলার আসামি ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কুবি প্রশাসনকে বলব, ছেলেদের দুপুরে ঘুমানোর যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে এ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া উচিত। প্রশাসনের নীরব ভূমিকার কারণে তাদের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্রসহ প্রশাসনের লোকের সামনে কীভাবে ক্যাম্পাসে ঢুকে। যারা এ ঘটনায় জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে এজাহারভুক্ত মামলা করতে হবে। তা না হলে সব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আমরা কঠিন আন্দোলনে যাবো, দরকার হলে আমরণ অনশন করবো।’

এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা প্রভোস্টদেরকে নিয়ে বসেছি এবং উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’ ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ থাকবে কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি তাদের সঙ্গে কথা বলতেছি।’

উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত ১১টা ৪৯ মিনিটে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কুবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তি করা হয়।

তবে শুরু থেকে কমিটি বিলুপ্তের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপ। সভাপতির পক্ষ থেকে কমিটি বিলুপ্তের কথা বলা হলেও সাধারণ সম্পাদক বলছেন কমিটি বিলুপ্ত করা হয়নি।

এদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুইটি গ্রুপও কমিটি বিলুপ্তি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান করছেন। এতে সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।