সারা বাংলা

চাহিদা কমায় পাটের দাম কমেছে 

করোনা মহামারি শেষ না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাজারে এবার পাটের চাহিদা কমেছে। আবারও দেশে অনাবৃষ্টির কারণে নদীর নোনা পানিতে পাট পঁচানোর ফলে আঁশ গুণগত মান হারিয়েছে। এ সব কারণে পাটের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।

পাটকলগুলোর উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে এবং পাট বিক্রিতে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনে ২০১০ সালে ১৫ জুলাই সরকার পাটের মানভেদে দাম মণ ১২০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকা বেঁধে দেয়। তবে বেঁধে দেওয়া দামে পাট বিক্রি হয়নি। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও ইয়াসের কারণে বড় ধরনের ধাক্কা খায় দক্ষিণাঞ্চলের পাটক্ষেত। ফলন কমে যাওয়ায় ২০২০ ও ২০২১ সালে মণ প্রতি দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৫০০০ টাকা।

পাট অধিদপ্তর, খুলনার সূত্র জানান, মোংলা বন্দর দিয়ে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা মূল্যের ৬ হাজার ৯০০ বেল; ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৯৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা মূল্যের ৮১ হাজার বেল; ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৫৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা মূল্যের ৩১ হাজার বেল পাট রফতানি হয়।

পাট অধিদপ্তরের খুলনার মুখ্য পরিচালক সরিজত সরকার জানান, বিগত বছরগুলোতে বেলজিয়াম, পাকিস্তান, চীন, ভারত, নেপাল, ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, আইভেরি কোস্ট, এলসালভাদর, রাশিয়া, ফিলিপাইন, ইউকে ও তিউনেশিয়ায় পাট রফতানি হয়। তবে এ মৌসুমের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, আইভেরিকোস্ট, এলসালভাদর ও রাশিয়ায় পাট রফতানি হয়েছে। গত তিন মাসে পাট রফতানি হয়েছে ১০ হাজার বেলের কাছাকাছি। রাশিয়া ও ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে বিশ্বের পাটের চাহিদা কমেছে।

তিনি জানান, সাতক্ষীরা জেলায় ১ লাখ ৮৯ হাজার বেল, খুলনা জেলায় ২৭ হাজার বেল এবং বাগেরহাট জেলায় ২২ হাজার বেল পাট উৎপাদন হয়।

এ অঞ্চলে কপিলমুনি, আঠারোমাইল, চুকনগর, শৈলদহ বাজার, বড়বুনি, চিতলমারির বড়বুনিয়া, মোল্লাহাট, সাতক্ষীরার বাশদহ, ঝাউডাঙ্গা, তালা, শুভাশিনী, জাতপুর ও পাটকেলঘাটা হাটে তোষা পাট মণপ্রতি ২৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ডুমুরিয়ার উপজেলার উপ-সহকারী পাঠ উন্নয়ন কর্মকর্তা নিলয় মল্লিক জানান, অনাবৃষ্টির কারণে নদীর নোনা পানি দিয়ে পাট পঁচানোর ফলে সোনালী আঁশ গুণগত মান হারিয়েছে।

ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা গ্রামের চাষি উত্তম কুমার জানান, স্থানীয় হাটে-বাজারে কাঁচা পাট মণপ্রতি ২৫০০ টাকা থেকে ২৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, কৃষি শ্রমিকের মুজুরি বেশি, সারের মূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু পাটের দাম কম হওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ হরিয়েছে।

রফতানিকারক সূত্র জানিয়েছেন, করোনা মহামারি, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও ইয়াসের কারণে ২০২০ ও ২০২১ অর্থবছরে পাটের উৎপাদন কম ছিল। বেসরকারি পাটকলগুলোর চাহিদা বেশি থাকায় দাম বাড়ে। সেকারণে প্রতি মণের দাম ৫০০০ টাকা ছিল। উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ব্যর্থ হয়। এবার করোনার পাশাপাশি রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অন্যান্য দেশে চাহিদা কম এবং দেশে অনাবৃষ্টির কারণে নোনাপানিতে পাট পঁচানোর ফলে গুণগত মান নষ্ট হওয়ায় দাম অর্ধেকে নেমেছে।