সারা বাংলা

জমি লিখে নিয়ে মাকে বাড়ি ছাড়া করলো ছেলে

স্ত্রী, ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে ছিল আনসার আলীর সংসারে। হঠাৎ স্ত্রী মারা যাওয়ার পর বিয়ে করেন রইমন নেসাকে (৭০)। দীর্ঘদিন সংসার করার পরও রইমনের ঘরে কোনো সন্তানের জন্ম হয়নি। সৎ ছেলে ও মেয়েদের নিয়েই ছিল বসবাস। কিন্তু ১৫ বছর আগে স্বামী আনসার আলী মারা যান। মৃত্যুর পর স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পদ ছিল তার শেষ ভরসা। কিন্তু সেই সম্পদই বৃদ্ধ বয়সে রহিমনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

স্বামীর মৃত্যুর পর সৎ ছেলে আফাজ উদ্দিন ও নাতী মোস্তফা মিলে রইমনের কাছ থেকে তার অংশের জমি লিখে নিয়েছেন বৃদ্ধ বয়সে দেখভালের কথা বলে। কিন্তু দেখভাল তো দূরের কথা ৬ মাস আগে রইমনকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন তারা। প্রতিবেশীরা রহিমনকে আশ্রয় দিয়েছিল, কিন্তু তাদেরকে হুমকি দেওয়ায় প্রতিবেশীরাও এখন আর রইমনকে ঠাঁই দিচ্ছে না।

এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামে। 

ভুক্তভোগী রইমন অভিযোগ করে বলেন, ‘স্বামী যখন আমাকে বিয়ে করে বাড়িতে আনেন তখন ওই সন্তানরা অনেক ছোট। আমি নিঃসন্তান হওয়ায় আগের ঘরের এক ছেলে ও তিন মেয়েকে নিজের সন্তানদের মতো বড় করেছি। কিন্তু শেষ বয়সে তারা আমার সঙ্গে এমন আচরণ করবে তা আমি ভাবতেও পারিনি। সৎ ছেলে আফাজ উদ্দিন ও নাতী মোস্তফা বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর এখন আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি।’

রোববার (২ অক্টোবর) রাতে বরমী ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামের সাহিদের দোকানের সামনে গিয়ে কথা হয় রহিমনের সঙ্গে। এ সময় তার চোখ থেকে অঝড়ে পানি ঝড়ছিল। এদিকে, গণমাধ্যম কর্মীদের আসার খবরে সেখানে ভিড় জমান প্রায় ৩০/৪০ জন গ্রামবাসী। তাদের একজন ইসমাইল।

ইসমাইল বলেন, ‘সম্প্রতি রহিমনকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর উদ্যোগ নেন সৎ ছেলে আফাজ। এনিয়ে তারা বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হলে কোভিড সনদ থাকতে হবে। তাই শনিবার (১ অক্টোবর) আরেক নাতনী শারজিন রিকশায় করে রহিমনকে কোভিড ভ্যাকসিনের টিকা দেওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু রহিমনকে তারা অন্য কোথাও ছেড়ে আসতে পারে এমন সন্দেহে আমরা বাধা দিয়েছি। এনিয়ে ছেলে আফাজের সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয়েছে এলাকাবাসীর।’

বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর দীর্ঘদিন রহিমন ছিলেন পার্শ্ববর্তী সাহেরা খাতুনের বাড়িতে। সাহেরা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী নেই। তাই রহিমন খালাকে আশ্রয় দিয়েছিলাম। তাকে নিয়ে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার ছেলে-নাতীরা আমাকে রহিমনকে আশ্রয় না দিতে নানা ধরনের পরামর্শ দিতো।’

বরমী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবুল কাশেমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। 

তবে একই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য জাকির হোসেন মাস্টার বলেন, ‘জমিজমা ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। আমি ইউপি সদস্য থাকাকালীন বিষয়টি একাধিকবার সমাধান করেছিলাম। এখন কি অবস্থায় আছে তা আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। আমি খোঁজ খবর নিয়ে রহিমনকে সার্বিক সহযোগিতা করবো।’

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘জমি লিখে নিয়ে বৃদ্ধাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া খুবই অমানবিক। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি বিষয়টি জেনে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পাশাপাশি রহিমনকে সরকারি যাবতীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে।’