সারা বাংলা

হোটেলে খাওয়া নিষেধ, বিক্ষুব্ধ রংপুরের হরিজন সম্প্রদায়

রংপুর নগরীর একটি হোটেলে হরিজন সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তিকে নাস্তা খাওয়া নিষেধ করাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে তারা। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রংপুর নগরীর ঐতিহ্যবাহী মৌবন রেস্টুরেন্টে। ওই হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হরিজন অধিকার আদায় সংগঠনের সভাপতি সুরেশ বাসফোর বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

রোববার (০৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় হরিজন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন রংপুর মহানগর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজার রহমান।

অফিসার ইনচার্জ মাহফুজার রহমান বলেন, ‘উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলাসহ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, হরিজন অধিকার আদায় সংগঠনের সদস্য ও রংপুর কেরামতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জীবন বাসফোর গত শনিবার (০১ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নগরীর কাচারি বাজারে মৌবন রেস্টুরেন্টে খেতে যান। এ সময় জীবনকে সেখানে ঢুকতে বাধা দেন রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারসহ কয়েকজন কর্মচারী। এ হোটেলে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনের খাবার খাওয়া নিষেধ জানিয়ে একপর্যায়ে জীবনকে ছোট জাত বলে আখ্যায়িত করেন তারা। এরপর তাকে গালিগালাজ ও ধাক্কা দিয়ে হোটেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে ম্যানেজার পরিচয়ে আতিকুল নামে একজন হোটেলের মেমোতে এই হোটেলে সুইপারের খাওয়া নিষেধ লিখে স্বাক্ষর করে জীবনের হাতে ধরিয়ে দেন।

এ বিষয়ে হরিজন অধিকার আদায় সংগঠনের রংপুরের সভাপতি সুরেশ বাসফোর বলেন, ‘স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী জীবনকে হোটেলের লোকজন ঢুকতে দেয়নি এবং মারধর করেছেন। আমি এ ঘটনাটি জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ হোটেলে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বললে তারাও আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। আমরা এর বিচার চাই।’ 

এই ঘটনার দুই দিন পার হলেও কোনো সুরাহা না পেয়ে আজ সোমবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর নগরীর কাচারি বাজার চত্বরে মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানায় 'হরিজন অধিকার আদায় সংগঠন'।

এ সময় মানববন্ধন থেকে বক্তারা বলেন, আজও স্বাধীন দেশে হরিজন জনগোষ্ঠীকে জাত-পাত, পেশা ও ভাষার কারণে বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে, যা এই সমাজ, রাষ্ট্র ও ব্যক্তি মানুষের বিকাশে বড় বাধা। দেশের উন্নয়নে হরিজন জনগোষ্ঠী বরাবরই ভূমিকা রাখলেও আজও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। 

দেশের সর্বস্তরের জনগণকে হরিজন জনগোষ্ঠীর প্রতি সৌহার্দপূর্ণ আচরণ ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নেতারা এই ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তার জন্য প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন হরিজন অধিকার আদায় সংগঠনের সহ-সভাপতি রাজু বাসফোর, সাধারণ সম্পাদক সাজু বাসফোর, সদস্য রাজা বাসফোর, উপদেষ্টা শবরন বাসফোর, লিটন বাসফোর প্রমুখ।