সারা বাংলা

চালু হচ্ছে রাজতিলক সিনেমা হল 

সিনেমা হল নিয়ে রাজশাহীর মানুষের আক্ষেপ অবশেষে মিটছে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা সিনেমা হল ‘রাজতিলক’ চালু হতে যাচ্ছে। সিনেমা হলটি রাজশাহী নগরীর পূর্বপ্রান্তে কাটাখালী বাজারে অবস্থিত। এক সপ্তাহ ধরে হলটির সংস্কার কাজ চলছে। মাসখানেকের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষে হলটি আবার চালু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

রাজশাহী মহানগরে এক সময় ছয়টি সিনেমা হল ছিল। আশপাশের প্রতিটি উপজেলাতেও ছিল সিনেমা হল। একে একে সবগুলো হলই বন্ধ হয়ে যায়। ২০১২ সালে ‘কমন জেন্ডার’ সিনেমা চলাকালে শহরের অদূরে পবার কাটাখালী বাজারের পুরনো রাজতিলক হলটিও বন্ধ হয়ে যায়। তখন রুম্মান আলী নামের চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক ব্যক্তি হলটি কিনে নেন। কিন্তু তিনিও হলটি চালু করতে পারেননি। এবার তাঁর কাছ থেকে মাসিক ভাড়ার চুক্তিতে হলটি নিয়ে চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন চলচ্চিত্রের প্রডাকশন ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন।

বুধবার (২০ অক্টোবর) সকালে রাজতিলক হলে গিয়ে দেখা যায়, হলের সামনে একটা সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। সেখানে লেখা, রাজতিলক সিনেমা হল চালু হতে যাচ্ছে যে কোনো দিন। ওপরে ‘রাজতিলক’ লেখাটি ‘রাজ তলক’ হয়ে গেছে। সবকিছুই সংস্কার করে ‘রাজতিলক’ নামেই সিনেমা হলটি চালু হতে যাচ্ছে। হলের ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, শ্রমিকেরা সংস্কার কাজ করছেন।

ভেতরে বসে কাজ তদারকি করছিলেন সাজ্জাদ হোসেন। তিনি জানালেন, ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি সিনেমার সঙ্গে আছেন। তার বাড়ি দিনাজপুরের ফুলবাড়ি। তবে তিনি ঢাকায় থাকেন। চলচ্চিত্রের প্রডাকশন ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। এর আগেও সিনেমা হল চালানোর অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। রাজশাহীতে কোনো সিনেমা হল নেই বলে তিনি রাজতিলক চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ব্যাপারে হল মালিকের সঙ্গে তার পাঁচ বছরের চুক্তি হয়েছে।

সাজ্জাদ হোসেন জানান, প্রজেক্টর এবং সাউন্ড সিস্টেম পুরোপুরি ডিজিটাল হবে। প্রায় ৬০০ দর্শক এই হলে একসঙ্গে বসে সিনেমা দেখতে পারবে। সব শ্রেণির দর্শকের সিনেমা দেখার ব্যবস্থা থাকবে এই হলে। আর কিছু দিন পরই শীত চলে আসছে। তবে আগামী গ্রীষ্ণের আগে এসিরও ব্যবস্থা করা হবে। তিনি মনে করছেন, রাজশাহীর মানুষ আবার হলমুখী হবেন।

সাজ্জাদ বলেন, সিনেমার সুদিন ফেরানোর জন্য সবাই চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে কিছু ভালো ভালো সিনেমা হয়েছে। দর্শকেরা সিনেমা হলমুখী হয়েছে। রাজশাহীতে যেহেতু আর কোনো হল চালু নেই, তাই এই হলটি চলবে বলে তিনি মনে করছেন। সেই বিশ্বাস থেকেই হল চালু করছেন।

রাজতিলক সিনেমা হলের নিচে স্মার্ট সেলুন। সেলুনে কাজ করছিলেন মিন্টু শীল। তিনি বলেন, হল যখন চালু ছিল তখনও তার দোকান চালু ছিল। হলে প্রচুর সিনেমা দেখেছেন একসময়। তার চোখের সামনেই হলটি বন্ধ হয়েছিল। আবার চালু হতে যাচ্ছে দেখে ভালো লাগছে।

সিনেমা হল চালু হচ্ছে দেখে খুশি রাজশাহীর সাংস্কৃতিককর্মীরাও। রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জাবীদ অপু বলেন, ‘রাজশাহীতে একটা সিনেপ্লেক্স হলে যত খুশি হতাম তার চেয়ে বেশি খুশি হচ্ছি রাজতিলক চালু হচ্ছে দেখে। কারণ, সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখার সুযোগ সবার হয় না। রাজতিলক সিনেমা হল খুললে সাধারণ দর্শকেরাও গ্রহণযোগ্য-স্বল্পমূল্যে সিনেমা দেখতে পারবে। এটা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে উপভোগ্য হবে। এত দিন পরেও একটা সিনেমা হল চালু হচ্ছে দেখেও আমরা খুশি।’