সারা বাংলা

এএসআইয়ের বিরুদ্ধে দেড় লাখ টাকা নিয়ে আসামি ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দেড় লাখ টাকা নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত এক আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) পাবনা পুলিশ সুপার বরাবর এমন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন হাজি জামাত আলী নামের ওই আসামির স্ত্রী আসমা খাতুন (৫৫)। 

রোববার (৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের সরদারপাড়া মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আসামির স্ত্রী ও মেয়েকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় বলেও অভিযোগ করেছে পরিবারটি।

এদিকে, ওই ঘটনায় মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে পাবনার পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর অভিযুক্ত এএসআই জাহিদুল ইসলামকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ও লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের সরদারপাড়া মহল্লার ওসমান রাজার (মৃত) ছেলে আলহাজ জামাত আলীর বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা করে সরকারপক্ষ। সম্প্রতি ওই মামলায় জামাত আলীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরই ভিত্তিতে ভাঙ্গুড়া থানার এএসআই জাহিদুল ইসলাম গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে একজন কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে জামাত আলীকে গ্রেপ্তার করতে যান। গ্রেপ্তারের সময় জামাত আলীর স্ত্রী ওয়ারেন্ট দেখতে চান। এ সময় ওই আসামিকে মোটরসাইকেলে তুলে রওনা দেন পুলিশ কর্মকর্তা।

জামাত আলীর স্ত্রী আসমা খাতুনের অভিযোগ, তার স্বামী জামাত আলীকে উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে পার ভাঙ্গুড়া কবরস্থানের সামনে নির্জন স্থানে আটকে রেখে মুক্তিপণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন জাহিদুল ইসলাম। ওই সময় জামাত আলী টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন জাহিদুল। পরে বাধ্য হয়ে দেড় লাখ টাকা দিতে রাজি হন জামাত আলী।

এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত স্থানীয় ছয় নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম গ্রেপ্তারকৃত জামাত আলীর বাড়িতে গিয়ে নিজের মোবাইল নম্বর থেকে জামাত আলীকে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে দেন। এরপর নগদ ৬০ হাজার টাকা ও ৯০ হাজার টাকার একটি চেক এনে দেন জামাত আলীর স্ত্রী আসমা খাতুন। 

মুক্তিপণ বাবদ দেড় লাখ টাকা হাতে পাওয়ার পর রাত ১টার দিকে জামাত আলীকে বাড়িতে পৌঁছে দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা এবং কাউন্সিলর। পরদিন সোমবার (৭ নভেম্বর) পৌর শহরের শরৎনগর বাজারের অগ্রণী ব্যাংকের শাখা থেকে ওই চেকের টাকা উত্তোলন করে নেন তুহিন নামের এক ব্যক্তি।

জামাত আলীর মেয়ে রিয়া আক্তার মিম অভিযোগ করে বলেন, ‘বাবা ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি কিনা জানা নেই। মধ্যরাতে কাউন্সিলর জহুরুল ও পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদ কোনো কাগজপত্র না দেখিয়ে বাবাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যান। এ সময় বাধা দিলে আমার হাতে হ্যান্ডকাফ পড়ায়। তারা খুবই বাজে আচরণ করেন। বাবা বাড়ির ফোন নম্বর বলতে পারেননি। পরে কাউন্সিলর জহুরুল বাড়িতে এসে ফোন ধরিয়ে দিয়ে দেড় লাখ টাকা দিতে বলেন। টাকা দেওয়ার পর বাবাকে তারা বাড়িতে রেখে যান।’

অভিযোগের বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক এএসআই জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জামাত আলী হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত। তাই ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়ায় তাকে আটক না করে, জামিন নেওয়ার জন্য সময় দিতে একটু দূরে নিয়ে কথা বলা হয়েছে। টাকা পয়সা নেওয়া ও তার স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’ 

ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘তারা কি করেছে সেটা আমি জানি না। তারা তো আমার সামনে কিছু করেনি, আমি কিভাবে জানবো?’ তবে আসামি জামাত আলীকে গ্রেপ্তারের সময় তিনি পুলিশের সঙ্গে ছিলেন বলে স্বীকার করেন।

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। একজন ব্যক্তির অপকর্মের দায় তো পুরো বিভাগ নেবে না। তাই ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সীর মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মাসুদ আলম বলেন, ‘ভুক্তভোগী পরিবারের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুরো বিষয়টির সত্যতা যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া অভিযুক্ত এএসআই জাহিদুল ইসলামকে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।’