সারা বাংলা

মাথাভাঙ্গার নদীর গার্ডার সেতু, নির্মাণের ৬ মাসেও হয়নি সংযোগ সড়ক

 ছয় মাস আগে শেষ হয়েছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর গার্ডার সেতু নির্মাণ। কিন্তু আজো শেষ হয়নি পাশের সংযোগ সড়ক। 

কেবল জমি অধিগ্রহণ হয়নি বলে আটকে আছে সড়ক নির্মাণের কাজ। ফলে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বাসিন্দাদের। 

তবে বিষয়টি সমাধানে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকন।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে গাংনী উপজেলার বামন্দী এইচডি থেকে দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর জিসি ভায়া মধুগাড়ি ঘাট সড়কের মাথাভাঙা নদীর ওপর গার্ডার সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ২৯ লাখ ৩২ হাজার ৯৭৯ টাকা। 

সেতুটি চালু হলে মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ার বাসিন্দারা ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ও শিক্ষাসহ নানা সুবিধা পাবে। সেতু নির্মাণের আগে সংযোগ সড়কের জন্য স্থানীয়রা জমি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেতু নির্মাণের পর তারা বেঁকে বসেন।

স্থানীয়দের দাবি, জমি সেতুর জন্য লাগলে দেবেন, তবে এর জন্য ন্যায্যমূল্য দিতে হবে। তবে এলজিইডি বলছে, বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর দুই জেলার মানুষের জন্য তৈরি (মধুগাড়ি-বেতবাড়িয়া) সংযোগ সেতুর নির্মাণকাজ ছয় মাস আগে শেষ হয়েছে। সেতুর দৌলতপুর উপজেলার পাশে সংযোগ সড়ক তৈরি হলেও গাংনী উপজেলার অংশে এখনো হয়নি। সেতু নির্মাণ হলেও এখনো ভোগান্তি দূর হয়নি দুপাড়ের লক্ষাধিক মানুষের। ফলে চিকিৎসাসেবা কিংবা ফসলাদি নিয়ে এপারের মানুষকে ওপারে যেতে হলে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হচ্ছে।

দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘গাংনী উপজেলায় ৩০ বছর ধরে গরু বেচাকেনার ব্যবসা করছি। আগে নৌকা করে যাতায়াত করতাম। সেতু নির্মাণ হওয়ার পর আর নৌকা চলে না। আবার সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় এখন গাংনীতে আসতে হলে ১০-১২ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হয়।’

গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙা গ্রামের কৃষক ময়জুদ্দিন বলেন, ‘নদীর এপার-ওপার দুদিকেই প্রায় ১৫ বিঘা জমি আছে। এতে সংগৃহীত সবজি দুই উপজেলার হাটে বিক্রি হয়। যখন নদীতে সেতু ছিল না, তখন নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতাম।এখন তাও পারছি না। সবজিবোঝাই ভ্যানগাড়ি ১০-১১ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হচ্ছে। এতে খরচ ও ভোগান্তি দুটোই বাড়ছে।’

গাংনীর বেতবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘সেতুর নিচ দিয়ে আমাদের প্রায় ৩৫ বিঘা জমি আছে।সেতু হলে মানুষের ভোগান্তি কমে যাওয়ার পাশাপাশি জায়গাগুলোর দামও বেড়ে যাবে। তাই ন্যায্যমূল্য পেলে সেতুর সড়কের জন্য জমি দিতে আপত্তি নেই তার।’

গাংনী উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ বলেন, সেতু নির্মাণের আগে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই নির্মাণ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। বর্তমানে সেতুর কাজ শেষ করে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে গেলে যারা জমি দিতে চেয়েছিলেন তারা বর্তমানে আপত্তি জানাচ্ছেন। তারা বাজারমূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দাম চাচ্ছেন। তাই ভূমি অধিগ্রহণের জন্য মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি।’

মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ও স্থানীয়রা জমি দিতেও সম্মত হওয়ায় সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেতু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর তারা এখন বেঁকে বসেছেন। তবে জেলা প্রশাসন এরই মধ্যে জমির মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আইনানুযায়ী সব ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।