সারা বাংলা

এসএসসিতে তিন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সাফল্য

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার জালাল উদ্দিনের ছেলে রবিউল ইসলাম জন্ম থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। লেখাপড়ার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ। ২০১৭ সালে পরিবার থেকে তাকে ভর্তি করা হয় পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাস্টে। পঞ্চম শ্রেণি থেকে সে এখানে পড়ালেখা করে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় শ্রুতি লেখকের সহায়তায় জালাল জিপিএ ৩.৬৭ পয়েন্ট অর্জন করেছে।

তার মতো রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার সাজ্জাদ হোসেনের ছেলে আব্দুর রব আকন্দ ৩.৬৭ এবং পাবনার সাঁথিয়ার মাহমুদপুর গ্রামের হযরত আলীর ছেলে অন্তর হোসেন জিপিএ ২.৫০ পয়েন্ট পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তারা দু’জন জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী।

সকল প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে এবার দৃষ্টি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এই তিন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করেছে। পাবনার মানব কল্যাণ ট্রাস্টের সার্বিক সহযোগিতায় এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল তারা।

মানব কল্যাণ ট্রাস্ট সূত্রে জানা গেছে, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রবিউল ইসলাম দোগাছী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী আব্দুর রব আকন্দ শহীদ ও অন্তর হোসেন শহীদ এম মনসুর আলী কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রবিউল ইসলাম জানায়, এক সময় পরিবারের অভাবে লেখাপড়া ছেড়েই দিয়েছিলাম। এরপর এই প্রতিষ্ঠানে এসে বিনা খরচে পড়াশুনা করছি। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছি। খুবই ভালো লাগছে।

তিনি বলেন, শিক্ষাবোর্ড থেকে আমাদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতির কোনও বই সরবরাহ করা হয়নি। ব্রেইল পদ্ধতির বই সরবরাহের দাবি জানাচ্ছি।

রবিউল ইসলামে বাবা জালাল উদ্দিন বলেন, জন্ম থেকে আমার সন্তান দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও পড়াশুনার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। অভাব-অনটন ও নানা প্রতিকূলতায় এক সময় তাদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। এসময় মানব কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল হোসাইন স্যারের সন্ধান পেয়ে এখানে ভর্তি করিয়ে দেন। তখন থেকে সব খরচ এই ট্রাস্টই বহন করে।

পাবনা মানব কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল হোসাইন বলেন, শতাধিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এই ট্রাস্টের সহায়তায় ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করছেন। এ ছাড়াও প্রায় ৬০ জনের মত শারীরিক প্রতিবন্ধী এখানে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠান থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এ প্রতিষ্ঠানে মাত্র দু’জন ব্রেইল পদ্ধতির শিক্ষক হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম। গত বছর ১১ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিলেও এবার ৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ব্যাপকভাবে এখানে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার সুযোগ দেওয়া যাবে।