সারা বাংলা

শনিবার ময়মনসিংহ আ.লীগের ২ ইউনিটের সম্মেলন, নেতারা প্রস্তুত

দীর্ঘ ছয় বছর আগামীকাল শনিবার (৩ ডিসেম্বর) ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই দুই ইউনিটের সম্মেলনকে ঘিরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়তি উন্মাদনা দেখা গেছে।

এদিকে সম্মেলনে অংশ নিতে আসা নেতাকর্মীদের বরণ করতে ময়মনসিংহ শহর তোরণ, ব্যানার ও পোস্টারে ভরে উঠেছে। এছাড়া সম্মেলনের জন্য নির্ধারিত স্থান সার্কিট হাউস মাঠের উত্তর পাশে ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল নৌকাকৃতির মঞ্চ। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন বলেও জানিয়েছেন দায়িত্বশীল নেতারা। 

ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের দুই ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। উদ্বোধক হিসাবে উপস্থিত থাকবেন দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। এছাড়া অন্যদের মধ্যে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে- কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ও শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির। 

ময়মনসিংহ নগরীর বাইপাস মোড়, মাসকান্দা, চরপাড়া, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড, গাঙ্গিনারপাড়, নতুন বাজার, জিলা স্কুল মোড়, টাউন হল, কাঁচিঝুলি মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন পদপ্রত্যাশী নেতা ও তাদের সমর্থকদের পোষ্টারে রাস্তার দুইপাশ ছেয়ে গেছে। 

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, ‘সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমন উপলক্ষে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস বিরাজমান। সম্মেলন উপলক্ষে একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। মঞ্চ নির্মাণ থেকে শুরু করে লাইটিং, সাউন্ড সিস্টেমের কাজ শেষ হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দাওয়াতের কার্ড পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সমাবেশে যাতে সব শ্রেণির মানুষ অংশ নিতে পারেন সেজন্য নগরীতে মাইকিং করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী সমাবেশ স্থল কানাই কানাই পূর্ণ থাকবে।’ 

সম্মেলনের আগে নেতাকর্মীদের ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এই দলের ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত শক্তিশালী সাংগঠনিক কমিটি রয়েছে। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে সব নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসব শুরু হয়েছে। আর প্রচার প্রচারণা এটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। তোরণ ও ফেস্টুন টাঙানো কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’ 

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ত্রিবার্ষিক কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। জেলা কমিটির অধীনে থাকা ১৩টি উপজেলার মধ্যে গত কয়েক মাসে ১০টির সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাকি রয়েছে সদর, ফুলপুর ও ভালুকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন।

অপরদিকে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টিতে সম্মেলন হয়েছে। এরমধ্যে ১২টিতে নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। অন্য ওয়ার্ডগুলোতে কমিটি দেওয়া এখনো বাকি রয়েছে। 

এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন একাধিক নেতাকর্মী। 

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশীরা হলেন- বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, সহ-সভাপতি ও সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদ, ফারুক আহমেদ খান, অ্যাডভোকেট পীযুষ কান্তি ও অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন খান।

সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীরা হলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত, বর্তমান জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমএ কুদ্দুস, শওকত জাহান মুকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ আলী আকন, শরীফ আহমেদ এবং প্রচার সম্পাদক আহসান আজাদ। এছাড়া আরও কয়েকজন এই পদের জন্য রয়েছেন বলে জানা গেছে।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে প্রচারণা চালাচ্ছেন- বর্তমান সভাপতি এহতেশামুল আলম, সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু ও সাদেক খান মিল্কী টজু। 

সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন- বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক গোলাম ফেরদৌস জিল্লু, কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান দুলাল, যুগ্ম সম্পাদক হোসাইন জাহাঙ্গীর বাবু ও সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল হক।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে ময়মনসিংহ জেলা ও নবগঠিত মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সম্মেলনের দিন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। পরে ১০ অক্টোবর সভাপতির দায়িত্ব পান অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা। সাধারণ সম্পাদক হন অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল। মহানগর কমিটিতে সভাপতি এহতেশামুল আলম এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মোহিত উর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়। শুধু মাত্র সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ পরিচালনা করা হয় প্রায় দুই বছর। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।

এদিকে ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা প্রস্তুতি। 

এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগের দুইটি ইউনিটের সম্মেলনে। সেহেতু অনেক মানুষের জমায়েতের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সম্মেলনের আশপাশে সিসি ক্যামেরা দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হবে। দলীয় কোনো গ্রুপিংয়ের মাধ্যমে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য নগরী জুড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হবে।’