সারা বাংলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সন্তানসহ প্রসূতির মৃত্যু, এক লাখে মিমাংসা  

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় গর্ভের সন্তানসহ প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা মাত্র এক লাখ টাকায় মিমাংসার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রোববার (৪ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে শহরে গ্রীন ভিউ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খাদিজা বেগম নামে ওই প্রসূতি মারা যান।  খাদিজা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের খেওয়াই গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী নয়ন মিয়ার স্ত্রী। 

খাদিজার মৃত্যুর পর রাতেই বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পুলিশের উপস্থিতিতে রোগীর স্বজনদের নিয়ে বৈঠকে বসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর আগে প্রসূতির স্বজনরা হাসপাতালের সামনে দোষীদের বিচারের দাবিতে অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে সদরের ১ নম্বর পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর ওই হাসপাতালে যান।  খাদিজার ভাসুর শরিফুল হাসান মবার দুপুরে মিমাংসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মানবিক দিক বিবেচনায় খাদিজার পরিবারকে এক লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের এই টাকা দেবেন। বিষয়টির মিমাংসার সময় হুমায়ুন কবীর উপস্থিত ছিলেন বলেও জানান তিনি।

খাদিজার স্বজনরা জানান, পাঁচ সন্তানের জননী খাদিজা সাড়ে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। হঠাৎ বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হলে শনিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে তাকে শহরের কুমারশীল মোড় এলাকার গ্রীন ভিউ স্পেশালাইজড হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক জিনিয়া খানের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর শারীরিক কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে অক্সিজেন দেওয়া হয়। এ সময় তার গর্ভের সন্তান নড়াচড়া করবে বলে আশ্বাস দেন চিকিৎসক। 

এদিকে রোববার সকাল ১১টায়ও চিকিৎসক খাদিজার কোনো খোঁজ না-নেওয়ায় স্বজনরা চাপ সৃষ্টি করেন। এ সময় চিকিৎসকরা তাদের আল্ট্রাসনোগ্রাম করার কথা বলেন। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে খাদিজার গর্ভে থাকা নবজাতক মৃত বলে জানা যায়। এরপর জিনিয়া খান এবং তার স্বামী হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. আবু হামেদ বাবু মৃত সন্তানটিকে নরমালি প্রসব করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে খাদিজার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়। 

শরীফুল হাসান জানান, সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে মৃত নবজাতক অপসারণের জন্য চিকিৎসককে বারবার অনুরোধ করার পরেও তারা শোনেননি। এক পর্যায়ে খাদিজার শারীরে খিঁচুনি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সে মারা যায়।

তবে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের দাবি, হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর বয়স সাধারণ প্রসূতির তুলনায় বেশি ছিল। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে তার খিঁচুনি ও রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল। তারা রোগীটিকে বাঁচানোর জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেছেন। 

হুমায়ুন কবীর রাইজিংবিডিকে বলেন, আমি মৃত্যুর খবর শুনে গিয়েছিলাম। তবে টাকা নিয়ে রফাদফার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। নিহতের পরিবারের সদস্যরা থানায় অভিযোগ দেয়নি। পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে ঘটনাটির মিমাংসা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমন কোনো মেসেজ আমরা পাইনি। রোগী এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই বিষয়টি সুরাহা করেছেন বলে শুনেছি।’

সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. একরাম উল্লাহ বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তের জন্য সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে পাঠানো হবে। তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।