বছরের প্রথম দিনে ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন বয়সি ৩০ প্রতিযোগিকে ছাড়িয়ে প্রথম হয়েছে নীলফামারীর প্রতিযোগী শিশু হাসিবুল ইসলাম (১৩)।
এছাড়াও ২য় স্থান অর্জন করেছেন ডোমার থেকে আসা ২১ বছর বয়সি কিশোর রনি ও ৩য় স্থানে থেকে বিজয়ী হয়েছেন নওগাঁ থেকে আসা ১৬ বছর বয়সি কিশোরী তাসমিনা।
রোববার (১ জানুয়ারি) সালন্দর ইউনিয়নের চৌধুরীহাট বিলপাড়া একালায় এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামীণ ঐহিত্য ধরে রাখতে ও নতুন প্রজন্মের কাছে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতাকে পরিচিত করার লক্ষে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর চাষি ক্লাবের উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়।
প্রতিযোগিতায় পঞ্চগড়, নওগাঁ ও নীলফামারী জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ৩০টি ঘোড়া অংশ নেয়। এরমধ্যে ৫০ ঊর্ধ্ব দুই জন, ১২ ও ১৩ বছর বয়সি দুই শিশুসহ ৪ জন কিশোর-কিশোরী এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ১৩ বছর বয়সি এক শিশুর বিজয় সকলের দৃষ্টি কাড়ে।
শিশু হাসিবুল বলে, স্বল্প বয়স থেকেই পিতার কাছে ঘোড়া চালানো শিখেছি। ৩ বছর আগে থেকেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছি। এর আগেও একবার ২য় স্থান পেয়েছিলাম। এবার প্রথম হতে পেরে বেশ ভালো লাগছে।
ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী সালন্দর চাষি ক্লাবের সভাপতি ডা. মো. মাজেদুল হক বলেন, ‘গ্রামীণ ঐহিত্য টিকিয়ে রাখতে এমন আয়োজন করি। শান্তিপূর্ণ ভাবে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়ায় তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৩০ ঘোড়ার মধ্যে ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের ঘোড়া নিয়ে আলাদা আলাদা দৌড় শুরু হয়। এরপর চুড়ান্তভাবে তিনটি গ্রুপের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার হিসেবে নগদ অর্থ, বাইসাইকেল ও টেলিভিশন তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।
পঞ্চগড়ের বোদা থেকে ঘোড় দৌড় দেখতে আসা হাবিব বলেন, ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা দেখে খুবেই ভালো লেগেছে। এমন আয়োজনে হাজারো দর্শকের উপস্থিতিতে আবেগ আপ্লুত হয়েছি। এ প্রতিযোগিতা দেখে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে মনে পড়ে গেলো। তবে এমন আয়োজন প্রতিবছরেই হলোই ভালো হয়।
শিক্ষার্থী আরিফ বলেন, ‘জীবনের প্রথম নিজ গ্রামে ঘোড়দৌড় দেখতে পেরে আনন্দিত। খুবই ভালো লেগেছে। প্রতি বছর এমন আয়োজন দেখতে চাই।
রফিকুল নামে ৫০ বছর বয়সি এক গোড়া মালিক জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বিভিন্ন এলাকায় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। অনেক প্রতিযোগিতায় তিনি বিজয়ী হয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আজও তিনি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। শারীরিক অবস্থা যতদিন ভালো থাকবে ততদিন তিনি ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিবেন।
সালান্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে এলাহী মুকুট চৌধুরী বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে ও নতুন প্রজন্মের কাছে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা পরিচিত করতে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। আগামীতেও আরো বড় পরিসরে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।
ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অরুনাংশ দত্ত টিটো, জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ আপেল, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য দেবাশীষ দত্ত সমীর,পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্চ উপজেলার চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক চিশতী, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারুল ইসলাম সরকার প্রমুখ।