সারা বাংলা

একটি বিদ্যালয়কে ঘিরে ২০০ মৌচাক, আতঙ্কে স্থানীয়রা

কুড়িগ্রামে একটি বিদ্যালয় ও তার চারপাশের গাছপালা ঘিরে রয়েছে ২০০টি মৌচাক। বিদ্যালয়ের কার্নিশেও চাক গড়ে তুলেছে মৌমাছিরা। এ অবস্থায় বর্তমানে বন্ধ রয়েছে বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম। এছাড়া বিভিন্ন সময় মৌমাছির আক্রমণের শিকার হয়ে আতঙ্কে দিন পাড় করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভারত সীমান্ত ঘেষা নারায়াণপুর ইউনিয়নের চৌদ্দঘড়ি গ্রামের চৌদ্দঘড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ৮/১০ বছর ধরে এ বিদ্যালয়কে ঘিরে স্বপ্ল সংখ্যক মৌচাক দেখা গেলেও এবার মৌচাকের সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে। মৌমাছির ভয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক না আসায় বন্ধ রয়েছে পাঠদান কার্যক্রম। চরাঞ্চলের এই বিদ্যালয়ের চারপাশের কার্ণিশ, জানালার সানসেট, বারান্দাসহ তিন তলা ভবনের বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য চাক বেঁধেছে মৌমাছিরা। মৌচাকে চিল ও বাজপাখির হানায় মৌমাছি হিংস্র হয়ে মানুষ, গরু, ছাগলকেও আক্রমণ করে। এতে করে সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।  

স্থানীয় বাসিন্দা সাবের আলী, আকবর হোসেন ও মন্টু মিয়া জানান, কয়েকদিন আগে মৌমাছির চাকে হানা দিয়েছিল চিল। এতে করে মৌমাছিরা ক্ষিপ্ত হয়ে চিলের পিছনে ধাওয়া করে। পরে চিলকে ধরতে না পেরে একজন মানুষ, দুইটি ছাগল ও একটি গরুকে আক্রমণ করে।  আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা গেলেও গরু ও ছাগল দুটিকে বাঁচানো যায়নি। তাদের দাবি মৌমাছির আক্রমনে এ পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ জন আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে দুই/চারজন মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে কেজি প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

চৌদ্দঘড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফ জানায়, মৌমাছির ভয়ে আমরা বিদ্যারয়ে আসতে পারি না। কখন হুল ফুটাবে তার ঠিক নাই। স্যারেরাও আসেন না। আমরা কিভাবে পড়ালেখা করবো। বিদ্যালয় থেকে একটু দূরে আমাদের ডেকে নিয়ে নতুন বই দিয়েছেন স্যাররা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মন্টু চন্দ্র সেন বলেন, ‘মৌমাছির কারণে বিদ্যালয় থেকে একটু দূরে বই উৎসব করা হয়েছে। বর্তমানে পাঠদান বন্ধ থাকলেও মৌমাছি চলে যেতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহে যদি সব মৌমাছি চলে যায় তাহলে স্বাভাবিকভাবে শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে। আর মৌমাছি থাকলে বিকল্প জায়গায় ক্লাস নেওয়া হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ে মৌমাছি উপদ্রব সহ্য করতে হয়। এটা প্রায় ৮/১০ বছর ধরে চলছে। তবে এবার সংখ্যায় বেশি হওয়ায় বিদ্যালয়ে পাঠদান অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে না।’ 

নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা বলেন, ‘সারা বছর এই বিদ্যালয়কে ঘিরে ২/৪টি মৌমাছির চাক থাকলেও প্রতিবছর নভেম্বর মাসে মৌমাছিরা এই বিদ্যালয়ে আসতে থাকে এবং চাক বাঁধে। এরা ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত থাকে। তারপর চলে যায়। তবে বিগত বছরগুলোতে সংখ্যায় একটু কম থাকলেও এবার অনেক বেশি। শুধু এই বিদ্যালয়কে ঘিরে রেখেছে প্রায় ২০০ মৌচাক। মৌমাছির আক্রমণে অনেকেই আহত হয়েছেন। পাশাপাশি বিদ্যালয়টিতেও পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’

নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা জাহান বলেন, ‘গত ৩০ ডিসেম্বর বিষয়টি অবগত হওয়ার পর উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা সাদিকুর রহমানকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর বন বিভাগের এ কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদশন করে জানান, মৌমাছিগুলো প্রকৃতিগতভাবেই চরাঞ্চলে এসেছে। ব্যাপকহারে সরিষার চাষ হওয়ায় এখানে চাক বেধেছে তারা। সরিষা মৌসুম শেষের দিকে। মৌমাছিগুলো এখন আপনা আপনি চলে যাবে। এছাড়া করার কিছুই নেই। আপাতত বিকল্প জায়গায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন তিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘চৌদ্দঘড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্ণিশ, জানালার সানসেট, বারান্দাসহ তিন তলা ভবনের বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য চাক বেঁধেছে মৌমাছি। এমনকি বাদ যায়নি ভবনের চারপাশের গাছপালাও। শিমুল, নারিকেল, কাঁঠাল, আমসহ ছোট-বড় বিভিন্ন জাতের গাছের ডালে ডালে ঝুলে আছে ছোট বড় দুই শতাধিক মৌচাক। আরো প্রায় দুই শতাধিক মৌচাক রয়েছে গ্রামের বিভিন্ন গাছপালাতেও। প্রতিবছর শীতের শুরুতে স্বল্প সংখ্যক মৌমাছি এসে এ বিদ্যালয় ভবনে চাক বাঁধলেও এবার মৌচাকের সংখ্যা বেড়ে গেছে বহুগুণ।’