সারা বাংলা

রংপুর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৬, শঙ্কায় আলু চাষিরা

রংপুরে আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন হাড়কাঁপানো শীতে জুবুথুবু হয়ে পড়েছে উত্তরের এই জনপদটি। কিন্তু এই শীতকে উপেক্ষা করেই আলুর ক্ষেতের পরিচর্যা করে যাচ্ছেন এই অঞ্চলের হাজারো কৃষক। তাদের শঙ্কা, আবহাওয়ার এই অবস্থা বজায় থাকলে আলুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

তবে আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী তিন চার দিনের মধ্যেই শীত কমে আসবে।

সোমবার ( ৯ জানুয়ারি) সকাল ৮টার দিকে রংপুর আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘন্টায় রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই দিন পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৭ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি, সৈয়দপুরে ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি, ডিমলায় ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি আর কুড়িগ্রাম রাজারহাটে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। 

গত এক সপ্তাহ ধরে উত্তরাঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। ঠান্ডায় নাকাল হয়ে পড়ছে চরাঞ্চলসহ ছিন্নমূলের অসহায় মানুষরা। শীতের এ তীব্রতা প্রথম ধাপে জানুয়ারি মধ্যবর্তী পর্যন্ত অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

এদিকে ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীত চেপে বসেছে তিস্তা, ঘাঘট, দুধকুমার, যমুনেশ্বরী ও করতোয়া নদী বেষ্টিত এলাকাগুলোতে। রংপুরে দুপুর নাগাদ সূর্যের দেখা মিললও নেই তেমন উষ্ণতা। এতে জনজীবনে দেখা দিয়েছে ছন্দপতন। শিরশিরে উত্তরে বাতাস আর আকাশ ভাঙ্গা হিম-কুয়াশা কাঁপন ধরিয়েছে গরম বস্ত্রহীনদের শরীরে। 

রংপুরের নদী তীরবর্তী বেশির ভাগ এলাকার মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের এই হানায় প্রভাব ফেলেছে কৃষকের ধানের বীজতলাতেও। 

এই আবহাওয়ায় বেশি বিপাকে পড়েছে রংপুর অঞ্চলের রবি শস্যের কৃষকরা। বিশেষ করে আলুচাষিরা শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। শীত আর ঠান্ডা বাতাস এবং সূর্যের তাপ না থাকায় চলতি মৌসুমে আলুর ঢগায় পচারি রোগের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা চাষিদের।

রংপুর কৃষি বিভাগের তথ্যমতে চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৩ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ হয়েছে। শাক সবজি ১১ হাজার ৩৩৫ হেক্টর, সরিষা ১১ হাজার ৫৮০ হেক্টর, বোরো ধানের বীজ তলা আছে ৫ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমি।

সরেজমিনে আজ সকালে নগরীর মাহিগঞ্জ, পীরগাছার দেউতি, সেয়দপুর ও ছিদাম এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা আলুর ক্ষেত আর বোরো ধানের বীজতলা পরিচর্যায় হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

দেউতি এলাকার আলু চাষি জাফরুল ইসলাম বলেন, শীত আর ঠান্ডা বাতাসের কারণে আলুর পচারি রোগের শঙ্কায় রয়েছেন সব কৃষক। আলুর বীজ সারসহ আনুসাঙ্গিক বাড়তি খরচের পরে যদি এই আবহাওয়ায় পচারি রোগ দেখা দেয় তবে আরও আর্থিক ক্ষতি হবে আমার।’

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান বলেন, ‘চলতি মৌসুমে আলুর চাষাবাদ এখন মধ্যবর্তী সময়ে। শীতে আলুর তেমন কোন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে শীতের সঙ্গে দিনের সূর্যের আলো যদি না থাকে এবং ঠান্ডা বাতাস বিরাজমান থাকে তবে আলুর কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে।’

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এবারের শীত মৌসুমে আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে রংপুরে। এই আবহাওয়া আরও কিছুটা কমার সম্ভাবনা আছে। আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’