সারা বাংলা

ফুলবাড়িয়ায় চলছে ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি খেলা

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় আড়াইশত বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা হুমগুটি খেলা চলছে। 

শনিবার (১৪ জানুয়ারী) বিকাল ৩টার দিকে উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের তালুক-পরগনা সীমানায় এই খেলা শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত চলছিল। প্রায় এক মণ (৪০ কেজি) ওজনের পিতলের তৈরি গোল বলের আকৃতি গুটি দখল না হওয়া পর্যন্ত চলবে এই লড়াই।

এ বছর ২৬৪তম আয়োজনের এই খেলায় কয়েক হাজার খেলোয়াড় অংশ নিয়েছে। খেলা দেখতে বিভিন্ন স্থান হতে লক্ষাধিক মানুষ সমাগম হয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী গুটি খেলার শুরু করার নির্দিষ্ট সময় থাকলেও শেষ হওয়ার সময় থাকে না। কোনো কোনো বছর টানা দুই-তিন দিন খেলা চলে। 

ব্রিটিশ শাসনামলে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জমিদার রাজা শশীকান্ত এবং ত্রিশালের বৈলরের জমিদার হেমচন্দ্র রায়ের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। জমির বিরোধ মীমাংসার জন্য বড়ই আটা গ্রামের তালুক-পরগনা সীমানায় গুটি খেলার আয়োজন করা হয়। খেলার শর্ত ছিল, গুটি যাদের সীমানার দিকে নিয়ে গুম করতে পারবে, তারা হবেন তালুক। পরাজিত দল হবে পরগনা। সেই সময় মুক্তাগাছার জমিদার বিজয়ী হন এবং তাদের আওতাভুক্ত স্থানকে তালুক নামকরণ করা হয়। তবে হার-জিৎ থাকলেও খেলা জনমনে যে আকর্ষণ সৃষ্টি হয়, তা কিন্তু থেমে থাকেনি। আজও তা ধারণ করে আসছে সেখানকার মানুষ।

খেলার তারিখ নির্ধারণ করা হয় বাংলা সাল হিসাব করে। পৌষের শেষদিন খেলার নির্ধারিত তারিখ। উপজেলার লক্ষ্মীপুর, বড়ই আটা, বাটিপাড়া, বালাশ্বর, চরকালিবাজাইল, তেলিগ্রাম, সাড়ুটিয়া, ইচাইল, কাতলাসেনসহ অন্তত ১৫-২০টি গ্রামের মানুষ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে। ঘরে ঘরে চলে নতুন আমন ধানের পিঠা-পুলির উৎসব। প্রায় প্রতিটি ঘরে আত্মীয়-স্বজনের আগমন ঘটে। খেলাকে উপলক্ষ করে বসে গ্রামীণ মেলা। এই মেলায় থাকে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় ঐতিহ্যবাহী খাবার ও নানান তৈজসপত্রের সমাহার।

হুমগুটি মিলন মেলার সভাপতি এবি সিদ্দিক বলেন, বিকাল ৩টার দিকে খেলা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে খেলোয়াড়রা আসছে। গুটি মূলত শক্তি পরীক্ষার খেলা। যারা শক্তি বেশি প্রদর্শন করবে তারাই খেলতে খেলতে এক সময় লুকিয়ে ফেলবে এবং খেলাটি শেষ হবে। 

এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ সন্ধ্যার পর বলেন, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত খেলা চলছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা আছে।