সারা বাংলা

চ্যাম্পিয়ন রাবেয়ার বাসায় খাবার নেই, বাজার নিয়ে গেলেন ইউএনও

২০২৩ সালের বিভাগীয় কমিশনার ব্যাডমিন্টন, ভলিবল ও হ্যান্ডবল (শীতকালীন) প্রতিযোগিতায় জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার মেয়ে মোছা. রাবেয়া খাতুন (১৪)।

রোববার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কুষ্টিয়া শেখ কামাল আধুনিক স্টেডিয়ামের ইন্ডোর কক্ষে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলায় সদর উপজেলাকে হারিয়ে রাবেয়া চ্যাম্পিয়ন হয়। তাঁর স্বপ্ন বড় হয়ে ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হবেন।

রাবেয়া খেলায় চ্যাম্পিয়ন হলেও তাঁর ভ্যানচালক বাবা অসুস্থতায় সপ্তাহখানেক কর্মক্ষম। ইতোমধ্যে গচ্ছিত খাবার ও টাকা ফুরিয়ে গেছে তাঁর। রোববার রাতে বাড়িতে খাবার নেই। চুলা জ্বলবে না। এমন খবর পেয়ে সন্ধ্যায় পৌঁছে যায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কানে। খবর পেয়ে দ্রুত তিনি রাবেয়াকে ডেকে নিয়ে পৌরবাজার থেকে চাল, ডাল, তেল, আলু, মরিচ, বেগুন, শাক-সবজি, মুরগির মাংস, মিষ্টি নিয়ে ছুটে যান তাঁর বাড়িতে।

রাবেয়া কুমারখালী পৌরসভার খয়েরচারা গ্রামের ভ্যান চালক মো. মামুন হোসেনের মেয়ে ও তেবাড়িয়া শেরকান্দি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। আগামী ২৭ জানুয়ারি বিভাগীয় পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন খেলতে যাবে রাবেয়া।

ছোট বেলা থেকে রাবেয়া ফুটবল, কাবাডি, হ্যান্ডবল, উচ্চ লাফ, ব্যাটমিনটন, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলায় পারদর্শী। আর্থিক ও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে একাধিকবার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন তিনি। ৫০তম আন্তঃস্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা ক্রীড়া সমিতির উদ্যোগে (খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) গোলাপ অঞ্চলের শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উচ্চ লাফে প্রথম স্থান অর্জন করে রাবেয়া। ঢাকা জাতীয় শিশু পুরস্কার-২০২২ এ ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিভাগের কাছে হেরে দেশের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হয়েছে রাবেয়া। এবার বিভাগীয় কমিশনার ব্যাডমিন্টন, ভলিবল ও হ্যান্ডবল (শীতকালীন) প্রতিযোগীতা-২০২৩ এর ব্যাডমিন্টন খেলায় জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। 

এ বিষয়ে রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে দেশসেরা খেলোয়াড় হতে চাই। কিন্তু বাবার সেই রকম সামর্থ নেই। আমি বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ২৭টি খেলায় পুরস্কার ও সনদ পেয়েছি। সেগুলো ঘরে রাখার জায়গা নেই। ভাঙা ঘরের বেড়ায় ঝুলিয়ে রেখে দিয়েছি। সুযোগ ও সহযোগিতা পেলে আমিও একদিন হতে পারি সেরাদের সেরা।’ 

ভ্যানচালক বাবা মামুন হোসেন বলেন, ‘অন্যের ভ্যান ভাড়ায় চালাই। মা, বাবা, স্ত্রী, তিন সন্তানসহ সাতজনের সংসার আমার। সপ্তাহখানেক শারীরিক অসুস্থতার কারণে উপার্জন নেই। জমানো কিছু টাকা ছিল সেটাও শেষ হয়ে গেছে। ইউএনও স্যার চাল, ডাল, তেল, শাক-সবজিসহ মেলা খাবার দিয়েছেন। এতে আমি খুশি হয়েছি।’ 

সকলের সহযোগিতা পেলে মেয়েকে ভালো খেলোয়াড় বানাতে চান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মন্ডল বলেন, রাবেয়া দারিদ্র্য জয় করে খেলাধূলায় এগিয়ে চলেছে। এর আগে তাকে মানসম্মত খেলার সামগ্রী উপহার দেওয়া হয়েছে। একটি মাধ্যমে রাতের খাবার নেই জানতে পেরে দ্রুত খাদ্য সামগ্রী নিয়ে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সেরাদের সেরা হওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে রাবেয়াকে নিয়ে।