সারা বাংলা

মশায় অতিষ্ঠ টাঙ্গাইলবাসী

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল প্রাঙ্গনে প্রাণি সম্পদ প্রদর্শণীর আয়োজন করা হয়। সকাল ১১ টায় সেখানে প্রতিটি স্টলেই কয়েল জ্বালিয়ে মশা নিধন করতে দেখা যায়। এমনকি মঞ্চেও দুটি কয়েল জ্বালানো ছিলো। তারপরও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্থানীয় সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেনসহ অতিথিদের হাত দিয়ে চাপড়িয়ে মশা তাড়াতে দেখা গেছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌরসভার ড্রেন ও খালগুলো মশা উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। গত দেড় মাস ধরে টাঙ্গাইল পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলাকায় মশার উৎপাত বেড়েছে। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত সর্বত্রই মশার যন্ত্রণা। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও রেহাই মিলছে না প্রাণীটির হাত থেকে। মশা এতোটাই বেড়েছে যে কয়েল, স্প্রে, ইলেকট্রিক ব্যাট কোনো কিছুইতেই কাজ হচ্ছে না। পৌরসভার পক্ষ থেকে মশা নিধনে পর্যাপ্ত ওষুধ না দেওয়ায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। 

টাঙ্গাইল পৌরসভা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৮টি ওয়ার্ড নিয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভা গঠিত। পৌর এলাকায় প্রায় চার লাখ মানুষের বসবাস। প্রতি বছর মশা নিধনের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়।

সোমবার (৬ মার্চ) পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহরের বিভিন্ন এলাকার ড্রেন ময়লা আবর্জনায় ভরে আছে। এছাড়াও শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া লৌহজং নদীতে ড্রেনের মাধ্যমে ময়লাযুক্ত পানি পড়ছে। ড্রেন ও নালার জমে থাকা পানিতে ভালো করে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে মশার উপস্থিতি। 

ইলেক্ট্রিক ব্যাট হাতে মশা তাড়ানোর চেষ্টা

শহরের কলেজ পাড়া এলাকার বাসিন্দা রিপন আহমেদ বলেন, ‘সন্ধ্যা নামার পর থেকেই ঘরে মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখলেও মশা কমছে না। শুধু রাতে না, দিনেও মশা কামড়াচ্ছে। কয়েল, ধোঁয়া কিছু দিয়েই কিছু হচ্ছে না।’

হেনা বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘মশার জন্য ঘরেই প্রবেশ করা যায় না। মনে হয় ঘরই মশার। কয়েল জ্বালালে কয়েলের উপরে মশা বসে থাকে। মনে হয় কয়েলের ধোয়া মশার অক্সিজেন হিসেবে কাজ করে। আর মশার খাবার হচ্ছে আমাদের রক্ত।’

জেলা সদর সড়কের পাশের দাস সম্প্রদায়ের (মুচি) শিবনাথ বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে কয়েল জ্বালাই। সারাদিন কয়েল জ্বলে তারপরও মশার উপদ্রব থামে না। ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না। বর্তমান সময়ে মশার স্প্রে ছিটানোর পর মশা মনে হয় আরও তাজা হয়।’

গত শনিবার বিকেলে শিবনাথের দোকানে হাবিবুর রহমান নামের এক গ্রাহককে ইলেকট্রিক ব্যাট হাতে নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘আমি জুতা কালি করতে এসেছি। মশার যন্ত্রনায় বসে থাকতে পারছি না। তাই ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়ে মশা মারছি।‘

ঠিকাদার ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ‘শহরে কোথাও বসে চা খেতে পারি না। কামড়ানোর পাশাপাশি নাক দিয়ে, মুখ দিয়ে মশা প্রবেশ করে। এছাড়াও কখনও কখনও চায়ের সাথে মশা খেতে হয়।’

কাগমারা এলাকার পল্লী চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘গত তিন বছর ধরে আমাদের এলাকায় মশার স্প্রে ছিটাতে দেখিনি পৌর কর্তৃপক্ষকে। মশার যন্ত্রনায় ঠিক মতো দোকানও করতে পারি না। পৌর কর্তৃপক্ষের উচিত এই দিকটিতে সুদৃষ্টি দেওয়া।’

পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মী ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরা সাত জন প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কাউন্সিলরদের নির্দেশনা অনুযায়ী মশার ওষুধ স্প্রে করি। আমরা যে কোন একটি ওয়ার্ডে সপ্তাহে একদিন দায়িত্ব পালন করি। আমরা ওষুধ দিয়ে যাই, মশা না মরলে আমাদের কিছু করার নেই।’  

মশা তাড়াতে অনুষ্ঠানের সভা মঞ্চে জ্বালানো হচ্ছে কয়েল

টাঙ্গাইল পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘আমি প্রতি সপ্তাহেই মশার ওষুধ বরাদ্দ পাই। পৌর কর্মীদের দিয়ে প্রতিটি এলাকায় ওই ওষুধ ছিটানো হয়।’

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, ‘মশা মারার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। ওষুধে মশা না মরলে আমি তো আর টিপে টিপে মশা মারতে পারবো না। আমি মশা নিধনের জন্য সর্বোচ্চ মানের ওষুধ ব্যবহার করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএসটিআইএ’র সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ওষুধ ক্রয় করা হয়। আমরা বিএসটিআই’র লোগোসহ পণ্যের মান ভালো হিসেবে গণ্য করে ব্যবহার করি। যদি বিএসটিআই নিম্ন মানের ওষুধ বাজারে ছাড়ে তাহলে সেই দায়ভার তাদের।’