সারা বাংলা

আ. লীগ নেতার বিরুদ্ধে কৃষি জমিতে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির অভিযোগ

পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিমের বিরুদ্ধে কৃষি জমিতে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও এ কাজে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অনুমতি নেয়া আছে বলে অভিযুক্ত দাবি করেছেন। তবে এই দাবির সত্যতা মেলেনি।   

স্থানীয়দের অভিযোগ, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত মনোহরপুর ব্র্যাক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে কৃষি জমিতে এই পুকুর খননের কাজ চলছে। কাজের সার্বিক তত্বাবধান করছেন মালিগাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম ও তার ভাই নাজেম উদ্দিন। তারা আটমাইলের বাদশা মোল্লা নামে এক ইটভাটার মালিকসহ কয়েকজনের কাছে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার মাটি বিক্রি করেছেন বলে জানা গেছে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি ট্রাকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভোর থেকে শুরু করে রাত ১০টা পর্যন্ত এ কাজ করা হয়। কখনও তা মধ্যরাত পর্যন্ত গড়ায়। স্থানীয় প্রধান আব্দুল আলীম আব্দুল্লাহ বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় তাকে (আব্দুল করিম) কেউ কিছু বলতে পারছে না। দীর্ঘদিন ধরেই মাটি কাটা হচ্ছে। এতে চরম সমস্যায় পড়েছেন গ্রামের মানুষ। উপজেলা প্রশাসন ও থানা থেকে পুলিশ ফোর্স আসলেও রহস্যজনক কারণে তারা ব্যবস্থা না নিয়ে চলে যায়। 

মনোহরপুর উত্তরপাড়া জামে মসজিদ, এবতেদায়ী মাদরাসা এমনকি স্থানীয় গোরস্থানের ভেতর দিয়ে ট্রাকগুলো চলাচল করে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে পাবনা-ঈশ্বরদী সড়ক সংযুক্ত গ্রামের পাকা পিচঢালা রাস্তা ভারী ট্রাক চলাচলের কারণে ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। সেখানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের আশপাশের বাড়ির মানুষ ধুলা এবং শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। বৃষ্টির দিন এসব সড়কে চলাচল করতে চরম সমস্যায় পড়বেন স্থানীয়রা। 

ট্রাক চলাচল করায় মনোহরপুর উত্তরপাড়া জামে মসজিদের সামনে ঈদগাহ মাঠের ক্ষতি হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘শুনেছি কিছু মানুষের যাতায়াতের পথ নেই। তাদের রাস্তা বেঁধে দেয়ার জন্য মাটি নিচ্ছে তারা। ফলে ঈদগাহ দিয়ে মাটি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছি। এ জন্য আমি বা প্রতিষ্ঠান কোনো টাকা নেইনি। কোথাও অভিযোগও করিনি।’

জানতে চাইলে অভিযুক্ত আব্দুল করিম বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছি। আগামী জুন পর্যন্ত মাটি কাটবো। সবাই মাটি কাটছে, আমি কাটলে দোষ কোথায়? সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন পুকুর কাটছেন, মাটি বিক্রি করছেন। তাকে ধরেন। পুলিশ প্রশাসন সবাই আসে, সবাই নিয়ে যায়। আপনিও আসেন। দেখা করেন। নিয়ে যান। নিউজ করার দরকার নাই।’  

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান মন্ডল বলেন, ১০ থেকে ১৫ টন ধারণ ক্ষমতা নিয়ে আমরা সড়ক নির্মাণ করি। সেখানে ৩০ থেকে ৪০ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন যানবাহন চলাচল করলে রাস্তা নষ্ট হবেই। এ ধরনের খবর পেলে আমরা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে জানাই। এর বাইরে দেখভালের সুযোগ আমাদের নেই। 

জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, আমরা কাউকে পুকুর খনন বা মাটি কাটার অনুমোদন দেইনি। বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।