সারা বাংলা

ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি, এএসআই ক্লোজড

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় শাকিল ফরাজী নামে এক ব্যবসায়ীকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে গজারিয়া থানার এএসআই সুমনকে ক্লোজ করা হয়েছে।

সোমবার (২০ মার্চ) রাতে জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শাকিল ফরাজী উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়নের মধ্য বাউশিয়া গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী এমদাদুল হক ফরাজীর ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে উপজেলার মধ্য বাউশিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে শাকিল ফরাজীকে একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যান এএসআই সুমনসহ কয়েকজন। পরে ওই ব্যবসায়ীকে একটি জঙ্গলে আটকে রেখে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। খবর পেয়ে এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে এএসআইসহ পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রেখে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করেন।

শাকিল ফরাজী বলেন, ‘মধ্য বাউশিয়া বাসস্ট্যান্ডে আমার একটি দোকান আছে। রোববার সন্ধ্যায় গজারিয়া থানার এএসআই সুমন জানান, আমার নামে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় একটি মাদক মামলা হয়েছে। তখনই তাকে বলেছি, যে গত কয়েক মাসের মধ্যে আমি নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় যাইনি। মামলার নথি দেখতে চাইলেও তিনি দেখাতে পারেননি।’

তিনি বলেন, ‘সোমবার সকালে একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেটকার নিয়ে আসেন সুমন। কথা আছে বলে তিনি আমাকে গাড়িতে তুলে নেন। গাড়িতে সুমন ছাড়াও টিশার্ট পড়া একজন ছিলেন, যিনি নিজেকে এসআই পরিচয় দিয়েছিলেন এবং কনস্টেবল রফিকুল ও গাড়ির চালক ছিলেন। চালক গাড়িটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন চর বাউশিয়া এলাকার নাবিস্কো কোম্পানির একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে নিয়েই একটি পিস্তল দেখিয়ে আমাকে সুমন বলেন ২ লাখ টাকা দিতে। টাকা না দিলে মাদক মামলার আসামি হিসেবে আমাকে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেন তিনি। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমার সঙ্গে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেন তিনি। এরপর আমাকে মারধর করে হ্যান্ডকাফ পড়ানোর চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করেন।’

শাকিলের মা রোকসানা বেগম বলেন, ‘সকালে পুলিশ শাকিলকে তুলে নেওয়ার পরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করি। ২-৩ ঘণ্টা গজারিয়া থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় শাকিলকে খুঁজেছি। পরে জানতে পারি, একটি জঙ্গলের ভেতরে শাকিলকে আটকে রাখা হয়েছে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশের হাত থেকে শাকিলকে উদ্ধার করে এনেছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গজারিয়া থানার এএসআই সুমন বলেন, ‘আমার এক বন্ধু নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় কর্মরত। সেখানে শাকিলের নামে একটি মাদক মামলা হয়েছে। আমার ওই বন্ধু আজ গজারিয়া থানায় এসেছিলেন এবং মামলার বিষয়ে নিরিবিলি কথা বলার জন্য শাকিলকে নাবিস্কো গ্রুপের বাগানে নিয়ে যাই।’

আসামিকে গ্রেপ্তার না করে তার সঙ্গে নিরিবিলি জায়গায় বসে কথা বলতে হবে কেন? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি এএসআই সুমন।

মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল মামুন বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে এএসআই সুমনকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’