সারা বাংলা

শত কোটি টাকা আত্মসাৎকারী আ. লীগ নেতা গ্রেপ্তার, এলাকায় মিষ্টি বিতরণ

পঞ্চগড়ে বেক্সিমকোর প্রায় শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা হারুন প্রধানকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

রোববার (২৬ মার্চ) সকালে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী। 

আটক হারুন অর রশিদ প্রধান জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের সাতমেড়া বাসামোড় এলাকার মৃত গফুর উদ্দীন প্রধানের ছেলে।

জানা গেছে, চলমান বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় শিল্প প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক এবং বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেড ও বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিশিষ্ট শিল্পপতি ওসমান কায়সার চৌধুরীর নেতৃত্বে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দুটি প্রজেক্টের মাধ্যমে ৩০ এবং ৫০ মেগাওয়ার্ড ক্ষমতা সম্পন্ন দুইটি সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে হারুনুর রশিদ হারুন প্রধানের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। প্রায় তিন বছর পর বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ ক্রয় কৃত জমি বুঝে চাইলে নানান টাল বাহানার মাধ্যমে ভুয়া দলিল দিয়ে কালক্ষেপণ করেন। এক পর্যায়ে এই দুইটি প্রকল্পের জন্যে প্রায় শত কোটি টাকা আত্নসাৎ করে হারুন প্রধান ও তার সহযোগী দল বল নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। বেক্সিমকো লিমিটেড তাদের কোম্পানির সাথে প্রতারণার ও টাকা উদ্ধারে প্রাথমিক পর্যায়ে একটি প্রজেক্টের পক্ষে ঢাকায় ধানমন্ডি থানায় ১১ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।

দুটি প্রজেক্টের মধ্যে প্রথম মামলায় একটি প্রজেক্টে বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেড এর ৪৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা আত্নসাৎ করার মামলার দ্বিতীয় আসামি হারুন অর রশিদ প্রধান ওরফে হারুন প্রধানকে পঞ্চগড় থেকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ।

এর আগে, গত ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর ঢাকার ধানমন্ডি মডেল থানায় বাবর মিয়াকে (৬০) প্রধান আসামি ও হারুন অর রশিদ প্রধানকে (৫৫) দ্বিতীয় করে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেড এর ডেপুটি ম্যানেজার আল মামুন। এর পর মামলার দ্বিতীয় আসামিসহ সবাই  আত্মগোপনে চলে যান। মামলার পর দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকলে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচলানা করে। এর মাঝে মামলার দ্বিতীয় আসামি হারুন প্রধানকে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকার ডিবি পুলিশ পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়ন থেকে আটক করে।

একটি মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, হারুন প্রধানসহ অন্য  অভিযুক্তরা ১১৫ একর ২৪ শতাংশ জমি বিভিন্ন ভুয়া ও জাল জালিয়াত দলিলের মাধ্যমে কোম্পানীর নামে ক্রয়ের কথা বলে ওসমান কায়সার চৌধুরী এবং বিভিন্ন মানুষের নামে ১১৪টি ভুয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি এবং করতোয়া সোলার লিমিটেড এর নামে ৩১টি ভুয়া সাব-কবলা দলিলের রেজিস্ট্রি দেখিয়ে ১৬ একর জমি কোম্পানীকে বুঝিয়ে দেয়। প্রতারণামূলকভাবে তারা তাদের নামে বেনামে এবং তাদের বিভিন্ন কোম্পানী ও ফার্মের নামে বাদীর সংশ্লিষ্ট কোম্পানী থেকে ৪৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করে বলে জানা যায়। অন্য আসামিদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

হারুন প্রধান গ্রেপ্তারের পর এলাকায় মিষ্টিমুখ। ছবি: সংগৃহীত

অপরদিকে, ২য় প্রকল্পের জন্যে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার আর্থিক বিনিয়োগ বিদেশ থেকে হওয়ায় আন্তর্জাতিক আইনি জটিলতার জন্যে এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের নিকট বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় সরাসরি ২য় প্রকল্পের নামে কোনো প্রকার মামলা করা সম্ভব হয়নি। তবে বিদেশি প্রকল্পের পক্ষে বেক্সিমকো আলাদা মামলার কথা ভাবছে। এবং সেই প্রকল্পের স্বার্থে স্থানীয় প্রতারক হারুন প্রধানসহ তার সহযোগী, দলবল ও ভুয়া দলিল তৈরি, রেজিস্ট্রি কাজে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মোট ১৯২টি মামলার প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি মামলা করা হয়েছে। বাকি ১৯১ টি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, স্থানীয়দের পক্ষে ভয়ভীতি, জবর দখল, ভূমি প্রতারণার অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয়দের একটি মামলা হয়েছে।

এদিকে, হারুন প্রধানকে আটকের খবরে মিষ্টি বিতরণ হয়েছে তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের মাগুরমাড়ি চৌরাস্তা এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায়। হারুন প্রধান নিজেকে ওসির ভাই ও আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকায় বিভিন্ন জনের পৈত্রিক ভূমি দখল করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তারুল হক মুকু বলেন, কোম্পানির জন্য জমি ক্রয় করে দেওয়ার নামে দীর্ঘদিন ধরে বেক্সিমকো কোম্পানির টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলো হারুন প্রধান। তার আচার ব্যবহারের ও প্রতারণার কারণে এলাকার মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠে। তার আটকের খবরে তাই স্থানীয়রা মিলে আমরা আনন্দে মিষ্টি মুখ করেছি। হারুন প্রধান নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছোট ভাই কোনো এক থানার ওসি পরিচয়ে, টাকা আত্মসাৎ, প্রতারণা ও স্থানীয়দের ভূমি দখলে রেখেছে।

দেবনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ ডাবলু জানান, হারুন প্রধান আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আছেন। তবে এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, হারুন প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেবনগর এলাকা থেকে তাকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।