সারা বাংলা

শাল গজারি বনে নেমেছে বসন্ত 

বনে এমন ফুল ফুটেছে, মান ক\’রে থাকা আজ কি সাজে। রবীন্দ্রনাথের গানের কথাই মিলে গেছে। গাজীপুরের শাল-গজারি বনে বসন্ত লেগেছে। সবুজাভ সফেদ ফুলে মেতেছে পুরো বনভূমি। ভ্রমর ও মৌমাছির সরব উপস্থিতি ফুলবনকে সারাক্ষণ জাগিয়ে রেখেছে। তাইতো মান অভিমান ভাসিয়ে দিয়ে সৌন্দর্য-পিয়াসী মানুষের নয়ন সুখের পাশাপাশি জোড়াচ্ছে মনও।

নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। না খুব গরম না ঠাণ্ডা। ভ্রমণবিলাসী মানুষের হাঁটাপথে ফুলের গালিচা বিছিয়ে রেখেছে শাল-গজারির মঞ্জুরিকা। বিচিত্র স্বরে গান গাইছে পাখপাখালিরা। গাজীপুরের শালবনজুড়ে যেন সত্যিকারের বসন্ত লেগেছে। সবুজাভ সফেদ ফুলে সেজেছে পুরো বনভূমি। পাখির চোখে দেখলে মনে হবে এক টুকরো বাংলাদেশ যেন পুষ্পের ডালি নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রমরের আহ্বানে বিলাচ্ছে ঐন্দ্রজালিক ঘ্রাণ।

বনকে যত্ন করলে মানুষ ধরে রাখতে পারবে তার আদি ও আসল জীবন- বলছেন সংস্কৃতিজনেরা। 

গাজীপুর সদর উপজেলা, ভাওয়াল উদ্যান, কালিয়াকৈর ও শ্রীপুর উপজেলার প্রায় প্রতিটি রাস্তার পাশে রয়েছে সারি সারি শাল গজারি গান। এসব গাছে এখন দু-চোখ যেদিকে যায় শুধু ফুল আর ফুল। গাছের পাতাগুলো ঝরে যাওয়ায় নতুন পত্রপল্লব গজাচ্ছে। একই সঙ্গে পুরো গাছের ডালপালা ফুলে ফুলে ভরে গেছে। বনের গাছগুলোর নিচে পড়ে আছে ঝরে পড়া গজারি ফুলগুলো। বনের ভেতরে সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া পিচের রাস্তায় বিছিয়ে আছে ঝরা ফুল, এ যেন এক গালিচা। 

বন অধিদপ্তরের মতে, গাজীপুরের ৩০ হাজার একর বনভূমি জুড়ে মার্চ মাসজুড়ে গজারি গাছে ফুল থাকে। এপ্রিলের শুরুর দিকে ফুল ঝরতে থাকে। এর গন্ধ তীব্র হয়। গজারি ফুল ঝরে পড়ার সময় উড়ে গিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত তার চিহ্ন রেখে দেয়। গাছের পত্রপল্লবে থাকা ফুলেরা যেন বসন্ত বাতাসে সাদা মেঘবালিকার চপল-চঞ্চল চিত্রায়ন। মন ভুলায় দর্শনার্থীদের। ফুলের তীব্র গন্ধ জাগায় ভিন্নতর অনুভূতি।

একসময় গাজীপুরে ৮৫ হাজার একর বনভূমি ছিল। দখলদারদের কুনজরে পড়ে তা নেমে এসেছে অর্ধেকে। এই শালবনকে বাঁচিয়ে রাখাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। অবাধে গাছ কাটা, আগুন ধরিয়ে দেওয়া, বনের মাটি কাটা বন্ধ করতে সবাইকে সচেতন করা সময়ের দাবি। বনকে যত্ন করলে মানুষ ধরে রাখতে পারবে তার আদি ও আসল পরিচয় -বলছেন সংস্কৃতিজনেরা।

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, শাল-গজারির ফুল নয় কেবল প্রকৃতিকে ভালো রাখতে সরকারি-বেসরকারি নজরদারির পাশাপাশি সর্বমানুষের আন্তরিক সচেতনতা প্রয়োজন। তাহলে প্রকৃতিও তার সন্তানদের সুশীতল ছায়াতলে সন্নিবেশিত রাখবে। 

ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অসীম বিভাকর বলেন, প্রকৃতির বন ও জীববৈচিত্র্য মানুষের নান্দনিক প্রয়োজন মেটায়। ভাওয়াল গজারি গাছ এখনো নির্মল শীতল পরিবেশ টিকিয়ে রেখেছে। গজারি বনের সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করে কিন্তু সত্যি বলতে দিনদিন যেভাবে বন দখল, বনে আগুন, বনে মাটি কেটে নিচ্ছে তাতে এই সৌন্দর্য আজ হুমকির মুখে। এই বন ও বনের সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার।