ঢাকার সাভারে ইজারা ছাড়াই বিরুলিয়া-আক্রাইন সড়কে টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার নির্দেশ অনুযায়ী, এসব সড়কে টোল আদায় অবৈধ।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় চার কিলোমিটার সড়কটিতে অন্তত ৭০০-৮০০ অটো রিকশা চলাচল করে। একেকটি রিকশা থেকে দিনপ্রতি ১০ টাকা করে তোলা হয়। টাকা তোলার জন্য দুই স্টপেজে ৪ জন কর্মী কাজ করেন। তারা টাকা নিয়ে মার্কার কলম দিয়ে অটো রিকশা চিহ্নিত করে দেয়। এছাড়া সড়কের ওপরে থাকা হালিম, চটপটি ও চায়ের দোকান থেকে দিনপ্রতি নেওয়া হয় ১০০-২০০ টাকা করে।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে এভাবেই অটো রিকশা থেকে টাকা উত্তোলন করছিলেন স্থানীয় ইমান্দিপুরের বাসিন্দা দুই যুবক সোহেল ও সাকিন।
টাকা তোলার কারণ জানতে চাইলে তারা জানায়, গত ১৩ এপ্রিল থেকে ছাত্রলীগের সাভার পৌরসভা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল মণ্ডলের নির্দেশে ও সোহেল রাজ রানার কথায় তারা অর্থ উত্তোলন করছেন।
অভিযোগ আছে, সড়কে চলন্ত ট্রাক, মিনি ট্রাক থেকেও একইভাবে অর্থ আদায় করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি এমন একটি চলন্ত ট্রাক থামিয়ে চাঁদা আদায়কালে সেখানে দুর্ঘটনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে চাঁদা উত্তোলনকারীরা স্থানীয়দের রোষের মুখে পড়েন। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তারা চাঁদা আদায়ের কথা স্বীকার করে।
অটো রিকশার একাধিক চালক এ চাঁদা দেওয়ার কথা জানান। তবে তারা কী কারণে চাঁদা দিচ্ছেন, তা জানেন না। এমনকি চাঁদা দিয়ে কোনও রসিদও পাননি বলে জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অটো রিকশা চালক বলেন, ‘আগে তো চাঁদা নিত না। এখন নিতেছে। টাকা না দিলে সমস্যা করবো। তাই দিতাছি।’
আরেক চা দোকানি বলেন, ‘সোহেল রানা ও রুবেল মণ্ডলের লোকেরা চাঁদা তুলছে। না দিলে ঝামেলা করে। তাই টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছি।’
সড়ক-মহাসড়কে চাঁদা আদায় নিষিদ্ধ
এদিকে সড়কটিতে এ টোল আদায় অবৈধ বলে জানা গেছে। গত ৩০ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত এক নির্দেশে বলা হয়, টার্মিনাল ছাড়া অন্য সকল সড়ক মহাসড়কে চাঁদা/টোল আদায় অবৈধ।
এটি বন্ধে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভার মেয়রকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া গত ৩১ জানুয়ারি সাভার পৌরসভার যে ইজারা তালিকা দেওয়া হয়েছে সেখানেও সড়ক/মহাসড়কে চাঁদা/টোল আদায় করা যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়।
৮ ফেব্রুয়ারি সাভার পৌরসভার মেয়রের আরেক নির্দেশনায় বলা হয়, পৌরসভা থেকে সড়ক, মহাসড়কে কোনও ইজারা দেওয়া হয় না ও চাঁদা আদায় করা হয় না।
যা বলছেন অভিযুক্তরা
চাঁদা তোলার নির্দেশদাতা সোহেল রাজ রানা বলেন, ‘রাজাশনের টেন্ডার আমার নামে না, রুবেল মণ্ডল আছে, সে নিয়েছে।’
টোল তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তুলেন বলতে কেমন শোনা যায়, আমি তো ওইটার ভেতর কিছু না। আমার সাথে তো কোনও লিয়াজোঁ নাই ওইটার, রুবেল মণ্ডল ঐ টেন্ডার নিয়েছে। আমি যতটুকু জানি এটা রুবেল মণ্ডল নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাকে অনেকেই ফোন করতেছে। ভাই আপনি ওইটা করছেন এইটা করছেন। থানা থেকে ফোন আসতেছে। আমি পেরাশেনিতে আছি এটা নিয়ে।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাভার পৌরসভা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল মণ্ডল বলেন, ‘এটা ইজারা নিয়েছে সুলতান ভাই। আমার দায়িত্ব হচ্ছে দেখাশোনা করা।’
তিনি বলেন, ‘অটো রিকশা থেকে তো টাকা নিই না। আমরা শুধু গাড়িগুলো থেকে টোল উঠাই। গাড়ির অনুযায়ী টাকা নেওয়া হয়, পিকাপ থেকে ২০ টাকা কোনটা থেকে ৫০। টাকা তোলার জন্য ৫/৭ জন কাজ করে। এদের সুলতান ভাই (ইজারাদার) টাকা দেয়।’
সড়ক মহাসড়কে চাঁদা/টোল তোলা বৈধ কি না- প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মহাসড়ক থেকে চাঁদা তুলা যাবে না এই বিষয় সুলতান ভাই বলতে পারবে। আর এটা তো জেলা থেকে নেওয়া হয় নাই। পৌরসভা থেকে নেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা দেখেছি। চলাচল রিকশা থেকে টাকা নেওয়া হয় না। পৌরসভা থেকে দেওয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে কিছুটা জানি। আর এটা তো নিষেধাজ্ঞা না। আর নির্দেশনা আমি অবশ্যই দেখেছি। আপনার সাথে আমি সামনাসামনি কথা বললে ভালো হতো।’
দায়িত্বপ্রাপ্তদের বক্তব্য
সাভার পৌর মেয়র হাজী আব্দুল গনি বলেন, ‘যদি টোল নেয় তাহলে পুলিশে দিয়া দেন। আমাদের চিঠিটা দেইখা যান। চিঠির মধ্যে পরিষ্কার লেখা আছে, কোনও লেনে কোনও সড়কে কোনও জাগায় চাঁদা উঠানো নিষেধ। যদি কেউ তুলে, ওই বেটারে থানায় নিয়া দেন।’
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এটা জানা নেই, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। আপনি থানা পুলিশকে বিষয়টি জানাতে পারেন। আমাদের টহল পুলিশ থাকে, তারা যদি হাতেনাতে ধরতে পারে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’