সারা বাংলা

বসিক নির্বাচন: কাউন্সিলর পদে দলের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে সংশয়

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। এখন এই সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডে কারা হবেন দলের মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী এ নিয়ে সংশয়ে নগরবাসী। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় এ সংশয় দেখা দিয়েছে। 

দীর্ঘ দিন ধরে বরিশালে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিমের সঙ্গে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর মধ্যে বিরোধ চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে বাদ দিয়ে তার চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন পেতে সরাসরি সহযোগীতা করেছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামিম বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বরিশাল সিটি এলাকার ৩০ ওয়ার্ডেই এই দুই গ্রুপের নেতা-কর্মী ও সমার্থক রয়েছে। ফলে একাধিক আওয়ামী লীগের নেতা বরিশাল সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দল থেকে মনোনয়ন দাবি করবেন। 

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলেন বর্তমান সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ও জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত। তবে সাদিক মেয়র পদে মনোনয়ন না পাওয়ায় সাজ্জাদের প্রচারণা নেই। এখানে বর্তমান কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লবই এখন সরব। তিনি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী বলে জানা গেছে।

একই ভাবে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে সেনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী কাউছার হোসেন শিপন ও সাফিন আহম্মেদ তারিক মনোনয়ন চাচ্ছেন। কিন্তু ওই ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মো. আনিচ উদ্দিন শরিফ এমপির অনুসারী। তিনিও দলের মনোনয়ন চান। নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডে নগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহমেদ মান্না ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে রাজিব আহসান খানের একই অবস্থা বিরাজ করছে। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী বর্তমান কাউন্সিলর এম. সাইদুর রহমান জাকির ও এমপির অনুসারী সাবেক কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ, নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডেও রয়েছে দুই পক্ষের কাউন্সিলর এটিএম শহিদুল্লাহ কবির ও জয়নাল আবেদীন হাওলাদার, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে আকতার উজ্জামান গাজী হিরু ও মো. আনোয়ার হোসেন। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার ও মো. শামীম মনোনয়ন চাচ্ছেন। 

এদিকে, সংরক্ষিত ১০টি নারী ওয়ার্ডেও একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।

২০১৩ ও ২০১৮ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগ থেকেই কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন নিশ্চিত করা হয়েছিলো। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গির বলেন, আগামী দুই এক দিনের মধ্যেই প্রার্থীদের কাছে ফরম বিতরণ করা হবে। ১৬ মের আগে কাউন্সিলর পদে আওয়মী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। 

কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ঠিক করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সহযোগীতা চাওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন মেয়র পদে আওয়ামী লীগের টিকেট পাওয়া আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। তিনি বলেন, জনগণের রায়ে আমি মেয়র হলে কোনো অন্যায়, অনিয়ম ও অপরাধ হতে দেব না। একটি নতুন বরিশাল গড়ার কাজ করতে হলে ভালো একট পরিষদ দরকার। সেই পরিষদে কে বা কারা থাকবেন সেটি অবশ্যই আমাকেই খেয়াল রাখতে হবে। 

প্রসঙ্গত, ৫৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বরিশাল সিটি করপোরেশন তিনটি থানা ও ৩০টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১ জন এবং পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৪ জন।