সারা বাংলা

দেশের বৃহৎ বৈশাখী মেলা ক্রেতা-বিক্রেতায় জমজমাট 

কথিত আছে চট্টগ্রামের মানুষ সাড়া বছরের বাড়ির তৈজসপত্র, ফুলের ঝাড়ু, আর নানা ধরনের মাটির তৈরি জিনিসপত্র কেনেন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষ্যে আয়োজিত বৈশাখী মেলা থেকে। গত তিনদিন ধরে চট্টগ্রাম নগরীর লালদিঘীর মাঠ ঘিরে প্রায় ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে সেই বৈশাখী মেলা। বাংলাদেশের কোথাও এতোবড় মেলা আয়োজিত হয় না। একজন মানুষের পুরো মেলা ঘুরে কেনাকাটা করতে সময় লেগে যেতে পারে পুরো একদিন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গ্রামীণ নানা পণ্য নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। 

আরও পড়ুন: জব্বারের বলী খেলায় কুমিল্লার শাহজালাল চ্যাম্পিয়ন

গত ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই মেলা আজ বুধবার (২৬ এপ্রিল) শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দর্শনার্থীদের কথা বিবেচনায় মেলা চলবে আরও দুই দিন। এদিকে, মেষ মুহূর্তে হাজার হাজার ক্রেতা-দর্শনার্থীর আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গন। 

সরেজমিন মেলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর আন্দরকিল্লা থেকে শুরু করে লালদিঘীর চরপাশ, জেলা পরিষদ চত্বর, সিনেমা প্যালেস, কোতোয়ালীর মোড় পর্যন্ত এই মেলা বিস্তৃত। মেলা জুড়ে গ্রামীণ সংস্কৃতির নানা পণ্যের ৫ হাজারেরও বেশি দোকান সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। গ্রামীণ শীতল পাটি থেকে শুরু করে ফুল ঝাড়ু, শলার ঝাড়ু, মাদুর, মাটির হাড়ি পাতিল, মৃৎশিল্পের নানা পণ্য, ফুলের টব থেকে শুরু করে পিটা-পুলির হাড়ি, মাটির ব্যাংক, ফুলের চারা, রেশমি চুড়ি, ঘর সাজানোর নানা পণ্যসহ এমন কোন পণ্য নেই যা এই মেলায় পাওয়া যাচ্ছে না। বড় বড় সুপার শপ বা ব্র্যান্ড শপগুলোতে যেসব মৃৎশিল্পের পণ্য ৫০০ বা হাজার টাকায় কিনতে হয় জব্বারের বলী খেলার মেলায় সেই পণ্য মিলছে ১০০ বা ২০০ টাকায়। এছাড়া মেলার মুড়ি-মুড়কির নানা খাবারের পশরা তো আছেই। 

মেলার শেষ সময় যতোই ঘনিয়ে আসছে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় যেনো আরও বাড়ছে। দুপুরের কড়া রোদ উপেক্ষা করেও ক্রেতারা পণ্য কিনতে ভিড় করছেন। মেলায় যারাই আসছেন ফেরার পথে সবাই কিছু না কিছু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কারো হাতে পাখা, কারো হাতে শীত পাটি কিংবা মাটির তৈরি ফুলের টব। শিশুদের হাতে নানা ধরনের খেলনা, মুড়ি মুড়কির প্যাকেট তো আছেই। 

আরও পড়ুন: জব্বারের বলী খেলা কাল, জমে উঠেছে বৈশাখী মেলা

মেলা থেকে ফেরার পথে কথা হয় নগরীর চাঁন্দগাঁও এলাকার গৃহবধূ তানজিলা তারিনের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, প্রতি বছর এই মেলা থেকে সারা বছরের ফুলের ঝাড়ু ও নানা ধরনের মাটির তৈজসপত্র কিনে থাকি। যতোই অভিজাত ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকি না কেন ফুলের ঝাড়ু আমাদের লাগেই। মেলা থেকে ৪ জোড়া ফুলের ঝাড়ু কিনেছি ৬০০ টাকা দিয়ে। মেলায় প্রতিজোড়া ফুলের ঝাড়ু দেড়শ টাকা থেকে আড়াইশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাসার জন্য ফুলের টব কিনেছি প্রতিটি ৩০০ টাকা করে।  

লালদীঘির পাড়ে সোনালী ব্যাংকের সামনে বিখ্যাত শীতলপাটির স্টল বসেছে কয়েকটি। সেখানে শীত পাটি কিনতে ভিড় করছেন অনেক ক্রেতা। আবদুর রহমান নামের এক বিক্রেতা বলেন, তিনি সিলেট থেকে শীতল পাটি বিক্রি করতে এই মেলায় এসেছেন। 

তিনি আরও বলেন, আমরা সারাবছর অপেক্ষায় থাকি জব্বারের বলী খেলার মেলার জন্য। এই মেলার তিন দিনে এখানে যতো শীতল পাটি বিক্রি হয়, আমরা সারা বছরেও এতো পাটি বিক্রি করতে পারি না। নকশা ও মান ভেদে সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা দামের শীতল পাটি রয়েছে এই স্টলে। ক্রেতারাও স্বাচ্ছন্দে এই শীতল পাটি কিনছেন। 

মেলায় বড়দের নানা পণ্যের পাশাপাশি শিশুদের খেলনা ও বিনোদনের নানা পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে আছে দোলনা, পুতুল, বাঁশি, টমটম। নারীদের জন্য রয়েছে নানা রঙের রেশমি চুড়ি, কানের দুল থেকে শুরু করে নানা ধরনের অলঙ্কার। সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কাঠের তৈরি ফার্নিচার, পালং, ওয়ারড্রব, আলনা, শোকেস। 

মেলা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই মেলা আজ বুধবার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মেলার মেয়াদ দুই দিন বাড়ানো হয়েছে। মেলা শেষ হবে আগামী শুক্রবার।