সারা বাংলা

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে কমছে না রোগীর চাপ, ভোগান্তি

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে বহির্বিভাগের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে দেখা যায়। ডাক্তারের অপেক্ষা দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে কেউ কেউ দ্বিতীয় তলার মেঝেতে বসে পড়েন। আবার কেউ পাশেই চেয়ারে বসে আছেন। এছাড়াও ডাক্তার বিলম্বে চেম্বারে আসায় রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে দেখা যায়। রোগী ও স্বজনদের দাবি, এটা নিত্যদিনের চিত্র।

মঙ্গলবার (২৩ মে ২০২৩) দুপুর ১২টায় বহির্বিভাগের ২১৭ নম্বর কনসালটেনন্ট (অর্থো-সার্জারি) কক্ষের সামনে রোগীদের ভিড় দেখা যায়। ততক্ষণ পর্যন্ত ডাক্তার না আসায় রোগীদের কেউ কেউ মেঝেতে বসে পড়েছেন। ১২টা ১৫মিনিটে ডাক্তার এসএম রোকনুজ্জামান এসে রোগী দেখা শুরু করেন।

এ সময় কথা হয় বাসাইল উপজেলার আন্দারপাড়া গ্রাম থেকে আসা মিনা বেগমের (৩৮) সঙ্গে। তিনি বলেন, এক বছর ধরে আমার কোমরে ব্যথা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ডাক্তারের জন্য বসে আছি। এর আগেও ডাক্তার দেখিয়েছি প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে। 

সদর উপজেলার বার্থা গ্রাম থেকে আসা মালা বেগম বলেন, আমার পাঁচ বছরের ছেলের হাত ভেঙে গেছে। সকাল সাড়ে আট থেকে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দুপুর সোয়া ১২টায় ডাক্তার আসার তারপর তিনি ছেলেকে দেখে কিছু ওষুধ লিখে দিয়েছেন। সব ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হবে।

এলেঙ্গা থেকে আসা শামু মণ্ডল বলেন, আমার ছেলে সোমবার রাতে বাড়িতে পড়ে গিয়ে হাতে ব্যথা পেয়েছে। পরীক্ষা শেষে ডাক্তারকে রিপোর্ট দেখাতে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। দাঁড়িয়ে থাকতে ছেলের পাশাপাশি আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে।

বহির্বিভাগের ২১২ নম্বর শিশুদের আইএমসিআই ও পুষ্টি কর্ণার কক্ষের সামনে রোগীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। সদর উপজেলার করটিয়া থেকে আসা আব্দুল বাছেদ মিয়া বলেন, আমার ছেলের তিন দিন ধরে জ্বর। ডাক্তার দেখাতে এসে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে লাইনে আছি। এই হাসপাতালে যেহেতু রোগীর চাপ আছে, সেহেতু বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করি।

শহরের সাবালিয়া থেকে আসা বৃষ্টি বেগম বলেন, আমার অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে আমি তিন ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। ডাক্তার দেরিতে এসেছেন। এতে আমার মেয়ের মতো অনেক রোগীর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের ভিড়

হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগেও ভর্তি রোগীর সংখ্যা আসনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। কালিহাতী উপজেলার পৌলি এলাকা থেকে আসা রোগীর স্বজন মনির হোসেন বলেন, আমার এক ভাইকে সকালে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেছি। তবে চাহিদা অনুযায়ী সেবা পাচ্ছি না।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৪০০ রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। হাসপাতালে বহির্বিভাগের চক্ষু বিভাগ ছাড়া অন্য সেবা চালু রয়েছে। চক্ষু বিভাগের সরঞ্জাম নিয়ে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সোমবার হাসপাতালে ৪০৭ জন রোগী ও মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৪৮২ জন রোগী ভর্তি ছিলো।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. একেএম হাবিবুল্লাহ বাহার বলেন, আমি সোমবার দায়িত্ব বুঝে পেয়েছি। হাসপাতালটি ২৫০ জন রোগীর জন্য বিছানা, ওষুধ ও খাবার বরাদ্দ থাকে। কিন্তু নির্ধারিত আসনের চেয়ে অনেক বেশি রোগী ভর্তি থাকে। কখনও কখনও সেবা দিতে হিমসিম খেতে হয়।

তিনি আরও বলেন, বহির্বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা নির্ধারিত সময়েই হাসপাতালে আসেন। অফিসের কাজ ও অন্য বিভাগে রোগী দেখার কারণে অনেক সময় বহির্বিভাগে রোগী দেখতে সময় লাগে। কিছু ওষুধ ঢাকা থেকে সাপ্লাই থাকে না। যে কারণে রোগীদের দেওয়া সম্ভব হয় না।