সারা বাংলা

পত্রিকা বিক্রির জমানো টাকায় হজ করেছেন মতিউর

পবিত্র হজ পালনের আগ্রহ থাকলেও সামর্থ্য ছিল না মতিউর রহমানের (৭০)। তবে, ইচ্ছে ছিল প্রবল। তাই মনের সাহসকে পুঁজি করে ৬০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রির জমানো টাকায় হজ পালন করেছেন তিনি।

মতিউর রহমান নরসিংদীর মনোহরদী পৌরসভার হররদীয়া গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত তিনি। বয়সের ভাঁড়ে শরীর নুয়ে গেলেও এখনো থেমে নেই তার দৈনন্দিন পত্রিকা বিক্রির কাজ।

রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে মতিউর রহমানের বলেন, ‘আমি খুবই দরিদ্র একজন মানুষ। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করি। সেখান থেকে যা আয় হয়, তা দিয়েই পরিবার নিয়ে চলি। ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল হজ করব। সেই স্বপ্ন পূরণে পত্রিকা বিক্রির লাভের টাকা থেকে প্রতিদিন কিছু জমাতাম। কোনদিন ২০ টাকা, কখনো ৩০ টাকা। এমন করতে করতে ৬০ বছর টাকা জমিয়ে গত বছর হজ করে আসলাম।’

তিনি জানান, ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে এই ব্যবসা শুরু করেন মতিউর। তার বাবাও পত্রিকা বিক্রির ব্যবসা করতেন। এখন মতিউরের ছোট ছেলে একই ব্যবসায় নেমেছেন।

মতিউর রহমানের ভাষ্য মতে, ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগ থেকে তিনি পত্রিকা বিক্রির কাজের সঙ্গে জড়িত। তখনকার দিনে আগের দিনের পত্রিকা পাওয়া যেত পরের দিন। তখন তিনি এজেন্ট ছিলেন না, পত্রিকা আসত শিবপুরের আব্দুল খালেক মাস্টারের নামে। সেখান থেকে ৭০-৮০ কপি পত্রিকা এনে বিক্রি করতেন। পাশাপাশি ডাক বিভাগের রানের চাকুরী করতেন।

চিঠি নিয়ে শিবপুরে আসা-যাওয়ার পথে পত্রিকা আনতেন। সেই পত্রিকা মনোহরদী ও পার্শ্ববর্তী গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ার কয়েকটি গ্রামের পাঠকের কাছে বিক্রি করতেন। এভাবে কিছুদিন কাজ করার পর নিজেই পত্রিকার এজেন্ট হয়ে যান। তখনকার দিনে প্রতিদিন ৫০/৬০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে মানুষের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দিতেন।

মতিউর রহমান জানান, ১০ বছর আগে ডাক বিভাগের চাকুরী থেকে অবসরে গিয়েছেন। তবে, পত্রিকা বিক্রি থেকে থেকে অবসর নেননি। এখনও মনোহরদীর গুরুত্বপূর্ণ অফিস, পৌরসভা অফিসসহ বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, এনজিও অফিস, মনোহরদী বাজারের দোকান এবং বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে পত্রিকা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আনন্দের সঙ্গেই পালন করেন।

মনোহরদী রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মতিউর রহমান ভাই অনেক সহজ, সরল ও সাদা মনের মানুষ। এই বয়সেও তিনি খুশি মনে পত্রিকা বিক্রি করেন। তার সঙ্গে আলাপ হলে সব সময় হজ পালনের কথা বলতেন। গত বছর হজ করে এসেছেন।’

মনোহরদী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জুয়েল বলেন, ‘মতিউর রহমান খুব সাধারণ জীবন যাপন করেন। আর্থিকভাবে খুব সচ্ছল না হলেও তিনি কারও কাছে পারিবারিক বা আর্থিক সমস্যা নিয়ে কথা বলেন না। অনেকে এই বয়েসে আর্থিক সমস্যায় পড়লে আমাদের (জনপ্রতিনিধিদের) কাছে এসে বিভিন্ন জিনিস আবদার করেন। কিন্তু তিনি তার মতো করে জীবন-যাপন করেন।’