সারা বাংলা

ট্রেনের যাত্রা বিরতির দাবিতে বিক্ষোভ, স্টেশন মাস্টারকে মারধর

নাটোরের লালপুর উপজেলার আজিমনগর রেলস্টেশনে ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ ট্রেনের যাত্রাবিরতি দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এসময় স্টেশন মাস্টারকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে, ঘটনার পরপরই চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

রোববার (৪জুন) উপজেলার আজিমনগর রেলস্টেশনে গোপালপুরের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে ঘটনাটি ঘটে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন–উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার মধুবাড়িরর মৃত শফিউল আলমের ছেলে মো. নাদিম আলম (৩০), কালুপাড়ার মো. হযরত আলীর ছেলে আহমেদ রেদুয়ান (১৮), মধুবাড়ির বদরুদ্দোজা সরকারের ছেলে শরিফুল কবির সজিব (৩৪) ও গোপালপুর বাজারপাড়ার সরোয়ার হোসেনে ছেলে আব্দুল মমিন (১৯)। 

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কর্মসূচি চলাকালে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি আজিমনগর স্টেশনে প্রায় ২০ মিনিট অবরুদ্ধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। অপরদিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সৈয়দপুরগামী ‘রূপসা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশনে এলাকার আউট সিগনালে প্রায় ২৫ মিনিট যাত্রা বিরতি করে। এরপর গোপালগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ‘টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি লাল নিশানা দেখিয়ে থামানোর চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু ট্রেনটি দ্রুত গতিতে চলে যায়। পরে উত্তেজিত লোকজন স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করেন। তারা স্টেশন মাস্টারকেও মারধর করেন।

আজিমনগর রেলস্টেশন মাস্টার আমিনুল ইসলাম জানান, ট্রেন থামানো দাবিতে বিক্ষুব্ধ লোকজন স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে। তাঁকে মারধর করে স্টেশনের বিভন্ন যন্ত্র তছনছ করে। 

এর আগে সকাল ১০টার দিকে আজিমনগর স্টেশন চত্বরে ঢাকা-চিলাহাটি রুটে নতুন যাত্রীবাহী ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন এলাকাবাসী। বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত আজিমনগর স্টেশনে বেশির ভাগ ট্রেনের স্টপেজ নেই। সদ্য উদ্বোধন করা ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ ট্রেনটিরও স্টপেজ রাখা হয়নি। এতে করে রেলসেবা থেকে বঞ্চিত হবে দুই উপজেলার মানুষ। অবিলম্বে চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি আজিমনগর স্টেশনে যাত্রাবিরতির দেওয়ার দাবি জানান তারা।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন–নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ বাবুল আকতার, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি খন্দকার শহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য ও নাটোর জেলার সভাপতি এবং উত্তরবঙ্গ আখচাষি সমিতির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, আখচাষি নেতা আনছার আলী দুলাল, লালপুর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার পাল প্রমুখ।

লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, থানা ও ঈশ্বরদী জিআরপি থানার পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রেলওয়ে স্টেশনে ঘটা ঘটনার বিষয়ে ঈশ্বরদী জিআরপি পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। 

ঈশ্বরদী জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিহির রঞ্জন দেব বলেন, হামলার ঘটনায় ঈশ্বরদী জিআরপি থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, বিক্ষোভকারীরা স্টেশন কাউন্টার ও যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করেছে। এ সময় স্টেশন মাস্টারকে মারধর করে আহত করেন আন্দোলনকারীরা। 

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (রোববার) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সবুজ পতাকা নাড়িয়ে ও বাঁশি বাজিয়ে ঢাকা-চিলাহাটি রুটে নতুন যাত্রীবাহী ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ ট্রেন উদ্বোধন করেন।