সারা বাংলা

‘লার্নিং কর্মব্যাগ’ দেখে পড়া মুখস্ত করছে পথশিশুরা

সিরাজগঞ্জের জয়ফুল লার্নিং স্কুলের শিক্ষামূলক ‘লার্নিং কর্মব্যাগ’ টোকাই ও পথশিশুদের পড়ালেখায় আলো ছড়াচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকা শিশুরা কাজের ফাঁকে ফাঁকে স্কুলে না গিয়েও কর্মব্যাগ দেখে পড়ালেখা শিখছে। এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে পৌরসভার চর-মালসাপাড়ায় অবস্থিত জয়ফুল লার্নিং স্কুল।

জয়ফুল লার্নিং স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ জন। এর মধ্যে ১১ জন টোকাই ও পথশিশু। এই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ঝুঁকিপুর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকে। গ্লোবাল ফান্ড ফর চিল্ড্রেনের সহযোগিতায় ডেভেলপমেন্ট ফর ডিজএ্যাডভান্টেজড পিপলের (ডিডিপি) পরিচালনায় দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের সেখানে লেখাপড়া করছে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে কর্মব্যাগের গায়ে লাগানো অক্ষর দেখে পড়া মুখস্ত করে শিশুরা। ফলে তারা এখন আর পড়া ভুলে যায় না। এসব শিশুর পরিবার অতি দরিদ্র হওয়ায় তাদের কাজে পাঠিয়ে থাকে। ফলে তাদের পক্ষে নিয়মিত স্কুলে যাওয়াও সম্ভব না। তাই এই শিশুদের কীভাবে স্কুলের বাইরে পড়ালেখা শেখানো যায়, সেই ভাবনা থেকে এই বিশেষ কর্মব্যাগ তৈরি করা হয়েছে। এসব শিশুরা যখন বিভিন্ন পণ্য রাস্তা থেকে কুড়াতে যায়, তখন তারা এই বর্ণমালা যুক্ত বিশেষ ব্যাগের সাহায্যে ক্লাসে শেখানো বর্ণমালা দেখে দেখে পড়া মুখস্ত করে। 

স্কুলের শিক্ষার্থী সোহান মোল্লা জানায়, ‘স্কুল করলে টাকা আয় করা যায় না। টাকার অভাবে বাবা-মা আমাদের মারধর করে থাকে। এ পরিস্থিতিতে কাজে যেতেই হয়। তাই এ স্কুলে আমরা সপ্তাহে দুই দিন ক্লাস করি। বাকি দিনগুলোতে জিনিসপত্র কুড়ানোর সময় ওই ব্যাগের গায়ের বর্ণমালা দেখে দেখে পড়া মুখস্ত করি। ফলে আর আমরা পড়া ভুলে যাই না। এতে ম্যাডাম আমাদের খুব আদর করে। আবারও পরিবারের সদস্যরাও ভালোবাসে।’ 

জয়ফুল লার্নিং স্কুলের দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক আমিনা খাতুন ও রোখসানা খাতুন বলেন, ‘আমরা খুব গরিব মানুষ। তাই ছেলের টোকানো জিনিস বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। একদিন কাজে না গেলে পেট চলে না। ছেলেকে স্কুলে না পাঠিয়ে কাজে পাঠাই। এ কারণে পড়ালেখা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে জয়ফুল লার্নিং স্কুলের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে শিশুরা কাজের ফাঁকে পড়ালেখা শিখছে। এতে আমরা খুবই খুশি।’ 

স্কুলের শিক্ষিকা মাহমুদা খাতুন বলেন, ২৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১ জন টোকাই ও পথশিশু। তারা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে থাকে। কাজ না করলে তাদের পেটে ভাত জোটে না। তারা নিয়মিত স্কুলে আসতে না পারলে সপ্তাহে দুই দিন স্কুলে এলেও পড়া মনে রাখতে পারে না। তাদের পড়া মনে রাখার সুবিধার্থে ও স্কুলে না এসেও যাতে পড়া মনে রাখতে পারে, সেই জন্য লার্নিং কর্মব্যাগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এতে তাদের কাজও হচ্ছে, পড়াও হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডিডিপির নির্বাহী পরিচালক কাজী সোহেল রানা বলেন, ‘কর্মজীবী শিশুদের জন্য মডেল তৈরি করেছি, যাতে অন্যরা এটিকে অনুসরণ করে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পারে।’