সারা বাংলা

বরিশাল ও খুলনা সিটিতে ভোট চলছে

বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। 

সোমবার (১২ জুন) সকাল ৮টায় দুই নগরীতে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি ইউনিটের ভোটকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশন নিজেও এই নির্বাচনকে সংসদ নির্বাচনের স্টেজ রিহার্সেল মনে করছে। তারা সিটির ভোট সুষ্ঠু করে আগাম পরীক্ষা দিতে চায়। এ জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে তারা সফলতার পরিচয় দিয়েছে। কমিশন প্রত্যাশা করছে, গাজীপুর সিটির তুলনায় খুলনা ও বরিশালের ভোট ভালো হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুলনা সিটিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের মেয়র পদে অবস্থান অনেকটাই ভালো। তবে, ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে বরিশাল সিটিতে। এই সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কামরুল আহসান (বিএনপির সাবেক মেয়র প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের ছেলে) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করিমের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে স্থানীয় ভোটাররা মনে করছেন।

আগামী ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির প্রথম দিকে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইসির হাতে সবচেয়ে বড় ভোট—গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এরইমধ্যে গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় আজ খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভোট হচ্ছে। শেষ দফায় রাজশাহী ও সিলেট সিটির ভোট হবে আগামী ২১ জুন। গত ৩ এপ্রিল এই ৫ সিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল।

সংসদ নির্বাচনের ৬ মাস আগে অনুষ্ঠেয় স্থানীয় সরকার পরিষদের এই ভোটকে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দেশবাসী গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এমনকি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও এই ভোটের দিকে তাকিয়ে রয়েছে বলে দাবি করেছে খোদ নির্বাচন কমিশন।

তবে, নির্বাচন বিশ্লেষকেরা বলছেন, আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভোটের মাঠে না থাকায় সিটি নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটের আসল চ্যালেঞ্জ ইসিকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে না। সব দলের অংশগ্রহণে যদি আগামী জাতীয় নির্বাচন হয়, সেখানে ইসি আসলে কতটা শক্ত অবস্থান নিতে পারবে, সেই ধারণা এবারের সিটি নির্বাচন থেকে পাওয়া যাবে না।

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি নির্বাচনে ইসি'র সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিল পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারা। তখন মামলা, গ্রেপ্তার, হুমকিসহ বিভিন্নভাবে ভোটের আগেই বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঠছাড়া করার অভিযোগ উঠেছিল। বিএনপি এবার সিটি নির্বাচনে নেই, ফলে ইসিকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। তবুও গাজীপুরের মতো স্বচ্ছ নির্বাচন আশা করছেন সবাই।

বরিশাল সিটির নির্বাচনের তথ্য: বরিশালে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন এবং নারী ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন।

এই সিটির নির্বাচনে ৭ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন—মো. আলী হোসেন হাওলাদার (স্বতন্ত্র, হরিণ), মিজানুর রহমান বাচ্চু (জাকের পার্টি, গোলাপ ফুল), আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, নৌকা), মো. ইকবাল হোসেন (জাতীয় পার্টি, লাঙ্গল), মো. আসাদুজ্জামান (স্বতন্ত্র, হাতি), মো. কামরুল আহসান (স্বতন্ত্র, টেবিল ঘড়ি) এবং মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করিম (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হাতপাখা)।

সিটির ৩০টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ১০টি পদের বিপরীতে ৪২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।

ইসির তথ্য মতে, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১২৬টি। এরমধ্যে ১০৬টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৮৪ শতাংশ কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচনে মোট ভোটকক্ষ ৮৯৪টি। প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন এবং প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭ জন সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।

গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ থেকে ২৬ জন ও সাধারণ কেন্দ্রে ২২ থেকে ২৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন প্রায় সাড়ে ৪ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।

বরিশালে প্রতিটি ভোটকক্ষে একটি ও কেন্দ্রের প্রবেশপথে দুটি করে ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সেই হিসাবে এই নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে থাকছে ১ হাজার ১৪৬টি ক্যামেরা।

বরিশাল সিটিতে মোতায়েন থাকছে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ান আনসারের সমন্বয়ে মোবাইল ফোর্স ৩০টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ১০টি, রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স ৩টি, র‌্যাবের ১৬টি টিম এবং বিজিবি ৭ প্লাটুন। এছাড়া, ৪৩ জন নির্বাহী হাকিম ও ১০ জন বিচারিক হাকিম দায়িত্ব পালন করবেন।

খুলনা সিটির নির্বাচনের তথ্য: খুলনায় ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন এবং নারী ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন।

এই সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচ জন। তারা হলেন—মো. আ. আউয়াল (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হাতপাখা), মো. শফিকুল ইসলাম মধু (জাতীয় পার্টি, লাঙ্গল), তালুকদার আব্দুল খালেক (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, নৌকা), এস এম শফিকুর রহমান (স্বতন্ত্র, টেবিল ঘড়ি), এস এম সাব্বির হোসেন (জাকের পার্টি, গোলাপ ফুল)।

খুলনা সিটির ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন এবং সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিটির ৩১টি ওয়ার্ডের আওতায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ২৮৯টি। এগুলোর মধ্যে এবারের নির্বাচনে ১৬১টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ (ইসির ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ) বিবেচনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ, মোট কেন্দ্রের ৫৬ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। নির্বাচনে ভোটকক্ষ ১৭৩২টি। প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন এবং প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭ জন সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া, থাকবে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ান আনসারের সমন্বয়ে মোবাইল ফোর্স ৩১টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ১১টি, রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স ৭টি,  র‌্যাবের ১৬টি টিম এবং বিজিবি ৭ প্লাটুন। নির্বাহী হাকিম ৪৪ জন ও ১০ জন বিচারিক হাকিমকে নিয়োগ করা হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বরিশালের মতো খুলনায়ও প্রতিটি ভোটকক্ষে একটি ও কেন্দ্রের সুবিধাজনক স্থানে দুটি করে ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলো মোট ২ হাজার ৩১০টি ক্যামেরার আওতায় থাকছে। 

নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য: গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের চেয়ে খুলনা ও বরিশালের নির্বাচন ভালো হবে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান। গতকাল রোববার (১১ জুন) সাংবাদিকদের দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনে বিধিবিধান প্রতিপালনে আমাদের অবস্থান কঠোর ছিল। খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচনের প্রতিটি পদক্ষেপেই আমরা তীক্ষ্ণ নজর রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা সরাসরি সিসি ক্যামেরায় এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবো।

তিনি বলেন, নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমাদের নির্দেশনা আছে, যা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা শতভাগ পালনের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। আমাদের বার্তা স্পষ্ট ছিল—আমরা সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করেছি। নির্বাচনি প্রচারণায় অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলা করলে কোনো ধরনের ছাড় দেই নাই। বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধের জন্য চেকপোস্ট করা হয়েছে।