টাঙ্গাইলের ভুঞাপুরে ঐতিহাসিক সিরাজকান্দির জাহাজ ধ্বংস দিবস উদযাপন করা হয়েছে। এ সময়ে জাহাজ ধ্বংস বা জাহাজ মারা নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিচারণ করেন।
শনিবার (১২ আগস্ট) দুপুরে ভূঞাপুর স্বাধীনতা কমপ্লেক্স হলরুমে মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সিরাজকান্দি জাহাজ ধ্বংস দিবস উদযাপন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম মুকুলের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, কাদেরিয়া বাহিনীর বেতার বিভাগের প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজ বাঙ্গাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা খোদাবক্স মিঞা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ (বীর বিক্রম), বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ গামা (গেরিলা), বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাছেদ করিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী তালুকদার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক মামুন তরফদার প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালে ১১ আগস্ট ঐতিহাসিক জাহাজ ধ্বংসের দিন। এটি ঐতিহাসিক জাহাজ মারা দিবস নামে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা এটি।
মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বক্তব্যে বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, জ্বালানি ও রসদ বোঝাই সাতটি যুদ্ধ জাহাজ নারায়ণগঞ্জ থেকে যমুনা নদী দিয়ে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছিল। জাহাজগুলো যমুনার শাখা ধলেশ্বরী নদীর টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের সিরাজকান্দিতে যাত্রাবিরতি জন্য নোঙর করে। বিষয়টি কাদেরিয়া বাহিনীর চৌকশ কমান্ডার হাবিবুর রহমান বীর বিক্রমের নজরে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা এলাকার লোকজন নিয়ে ১০ আগস্ট জাহাজ দুটিতে আক্রমণ চালায়। তারা জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অস্ত্র বোঝাই জাহাজ এস. ইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এল.সি-৩ ও এস. টি রাজনের দখল নেয়। এ সময় অন্য জাহাজগুলো সিরাজগঞ্জের দিকে পালিয়ে যায়। দখলকৃত জাহাজ দুটিতে রাখা ১ লাখ ২০ হাজার বাক্সে তৎকালীন ২১ কোটি টাকা মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধারা আনলোড করে নিজেদের করে নেয়। আনলোড করে পরের দিন ১১ আগস্ট জাহাজ দুটিতে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করা হয়। এ ঘটনায় ১১ আগস্ট হতে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত পাক বাহিনীর সঙ্গে কাদেরিয়া বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয়। এতে ৩ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয় এবং আহত হয় অন্তত ২০ জন। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসের ইতিহাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তি বাহিনীদের হাতে এত বড় ক্ষতি ও বিপর্যয়ের নজির নেই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই ঘটনাকে পট পরিবর্তনকারী অধ্যায় হিসেবে গণ্য করা হয়।
কমান্ডার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বের কাছে পাকিস্তনি হানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। কমান্ডার হাবিবুর রহমানের অসীম সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘বীরবিক্রম’ উপাধিতে ভূষিত করেন।