সমতলের চায়ের ভূমি পঞ্চগড়ে চালু হচ্ছে দেশের তৃতীয় চা নিলাম বাজার। এরই মধ্যে সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চা বোর্ড। ৫টি ব্রোকারস হাউজ ও ২টি ওয়ারহাউজকে অনুমোদন দিয়েছে চা বোর্ড। আগামী ২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হবে এই নিলাম বাজার। উদ্বোধন করবেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশী।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুরুতে নিলাম হবে অনলাইন কেন্দ্রিক। এই নিলাম বাজার গড়ে উঠলে সমতলের চা কেন্দ্রিক অর্থনীতি পাবে নতুন মাত্রা। বাঁচবে কারখানা মালিক ও ব্যবসায়ীদের যাতায়াত খরচ। চাষিরাও পাবেন কাঁচা চা পাতার ন্যায্যমূল্য।
বুধবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে এ উপলক্ষে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অংশীজনদের নিয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম। চা বোর্ড আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চা বোর্ডের যুগ্ন সচিব নুরুল্লাহ নুরী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান শেখ, ১৮ বিজিবির লে. কর্ণেল যোবায়েদ হাসান, পুলিশ সুপার এস. এম সিরাজুল হুদা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট প্রমুখ।
চা বোর্ড জানায়, বর্তমানে চা উৎপাদনে চট্টগ্রামকে ছাড়িয়ে গেছে প্রান্তিক এ জেলা। ২০২২ সালে উত্তরের সমতলের পাঁচ জেলায় ২৫টি কারখানায় তৈরি চা উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৫৯ হাজার ২২৬ কেজি। যার মধ্যে পঞ্চগড়েই তৈরি উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৫২ লাখ কেজি। দেশের মোট উৎপাদিত তৈরি চায়ের প্রায় ১৯ শতাংশ আসছে সমতলের চা থেকে। কিন্তু সমতলে কোনো নিলাম বাজার না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় কারখানা মালিক ও চা ব্যবসায়ীদের। চায়ের চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলের নিলাম বাজারে চা নিয়ে যেতে যাতায়াতেই গুনতে হতো বড় খরচ। চায়ের দাম নিয়েও ধোঁয়াশায় থাকেন প্রান্তিক চা চাষিরা।
তবে সমতলে চায়ের নিলাম বাজার স্থাপনের দীর্ঘদিনের দাবি এবার আলোর মুখ দেখছে। চা ব্যবসায়ী ফোরাত জাহান সাথী বলেন, ‘আগে আমাদের চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলের নিলাম বাজার থেকে চা ক্রয় করে মোড়কজাত করতে হতো। পরিবহণেই অনেক বড় অঙ্কের খরচ হতো। এখন আমরা পঞ্চগড় থেকে চা কিনতে পারব।’
সাজেদা রফিক চা কারখানার পরিচালক আকতারুজ্জামান সুমন বলেন, ‘এখানে নিলাম কেন্দ্র চালু হলে পথ খরচ বেঁচে যাবে। এতে আমরা যেমন লাভবান হবো, তেমনি চাষিরাও লাভবান হবে। সেইসঙ্গে চাষিরাও তাদের চা পাতা কী দরে বিক্রি হচ্ছে তা জানতে পারবে।’
ইন্ডিগো ব্রোকারস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমরা সব নিলামের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। আমরা আশা করছি, দেশি-বিদেশি বায়ারদের সাড়া পাব। আমাদের শুরুটা ভালো হবে। সেইসঙ্গে এখানে চায়ের অর্থনীতি নতুন মাত্রা পাবে।’
চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম বলেন, এই এলাকা চায়ের জন্য ব্যাপক সম্ভাবনাময়। বর্তমান সরকার মনে করেছে, এখানে একটি নিলাম বাজার হওয়া উচিত। আগে এখানে শুধু চা উৎপাদন হতো, এখন কেনাবেচাও হবে। শ্রীমঙ্গল এবং চট্টগ্রামে যেতে হবে না। যেকোনো স্থান থেকে এই অনলাইন নিলাম কেন্দ্র থেকে চা কেনা ও বেচা করা যাবে। এই নিলাম কেন্দ্রের মাধ্যমে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে। সমতলের চায়ের আরও বিকাশ ঘটাবে। তবে ভালো মানের চা তৈরির উপর জোর দিতে হবে বলে জানান তিনি।