সারা বাংলা

সহকর্মীর দুই সন্তানকে বাঁচিয়ে নিজে ডুবে গেলেন লেকের গভীরে 

লেকের পানিতে পড়ে যাওয়া সহকর্মীর দুই সন্তানকে উদ্ধারের পর নিজেই লেকের গভীর পানিতে তলিয়ে গেলেন জাপানের রেকুটেন কোম্পানির সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার খাইরুল কবির (৩৮)। 

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে ১৫০ কিলোমিটার দুরে সিজুওকা প্রিফিকসার লেকে বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

খাইরুল কবির পাবনা শহরের শালগাড়িয়া রেনেসাঁ পাঠাগার এলাকার সাবেক মিলিটারি একাউন্টস অফিসার মরহুম আবুল কাশেম শিকদার এর ছেলে। খাইরুল পাবিপ্রবি’র প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য প্রফেসর ড. আমিন উদ্দিন মৃধার ভাগ্নে। 

খাইরুল কবিরের এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে টোকিও’র মাসিদাতে এবং পাবনা শহরের শালগাড়িয়া ও গ্রামের বাড়ি বেড়া উপজেলার দাঁতিয়া শিকদার বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে।

পারিবারিক সুত্র মতে, অত্যন্ত মেধাবী খাইরুল কবির ৭ বছর আগে জাপানের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি রেকুটেন এর সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি স্ব-পরিবারে টোকিও’র মাসিদাতে বসবাস করতেন। একদিন আগে জাপান প্রবাসী বেশ কয়েকজন আত্মীয় স্বজন ও সহকর্মীদের সঙ্গে সপরিবারে বেড়াতে যান। রোববার সকালে তারা যান সিজুওয়াকা প্রিফিকসার লেকে। এই লেকটি একটি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসগরে যুক্ত হয়েছে। রোববার আনুমানিক বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায় খাইরুল কবিরের ২ বন্ধু ও সহকর্মীর ২ কিশোর ছেলে ওই লেকের পানিতে পড়ে যায়। তাদের তলিয়ে যাওয়া দেখে খাইরুল কবির দ্রুত ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই ছেলে দুটিকে লেকের পানি থেকে টেনে তুলে প্রাণ বাঁচান। কিন্ত ছেলে দুটি প্রাণে বাঁচলেও খাইরুল আর উঠে আসতে পারেননি। তিনি দ্রুতই গভীর পানিতে তলিয়ে যান। খাইরুলের এই তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য তার স্ত্রী সন্তানসহ অন্যরা পাড়ে দাঁড়িয়ে অবলোকন করলেও কেউ তাকে উদ্ধার করতে পারেননি। 

খবর পেয়ে সেখানকার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থা ৩ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে দুপুর ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করে। এরপর সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খাইরুলের লাশ বর্তমানে ইয়ামানাসী প্রিফেকচারের একটি হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে।

খাইরুল এর স্ত্রী মিতু জানান, সহকর্মীর ২ সন্তানকে উদ্ধারের পর আমাদের চোখের সামনেই খাইরুল গভীর পানিতে তলিয়ে যায়। খাইরুলের দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। তারাও বাবার এভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। লেকের পাড় থেকে তাদের সরানো যাচ্ছেনা। আমি এখন কিভাবে ওদের সান্ত্বনা দেবো। 

খাইরুলের জাপান প্রবাসী স্বজন শান্তা খাতুন জানান, বাংলাদেশী কমিউনিটিতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। তার অকালে চলে যাওয়ায় সেখানে এক বেদনা বিধুর পরিবেশের সৃস্টি হয়েছে। 

এদিকে সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার খাইরুল কবিরের অকাল এবং মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে তার পাবনা শহরের শালগাড়িয়া ও গ্রামের বাড়ি বেড়া উপজেলার দাঁতিয়া শিকদার বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। খাইরুলের মা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। প্রতিবেশীরাও এই কৃতি সন্তানের এভাবে বিদায় নেওয়া মেনে নিতে পারছে না। 

জানা গেছে, খাইরুলের লাশ কবে দেশে পাঠানো হবে-সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। তবে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে খুব দ্রুত তার লাশ দেশে পাঠানো হবে।