সারা বাংলা

গোপালগঞ্জে ব্যাংকের ভেতর কৃষককে মারধরের অভিযোগ

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ব্যাংকের ভেতর এক কৃষক, তার ছেলে ও জামাতাকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুষ ও হয়রানির অভিযোগ করায় তাদের মারধর করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই রাখা হয় বলেও অভিযোগ করেছেন তারা। 

ব্যাংক কর্মকর্তাদের দাবি, ঋণ চেয়ে না পেয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ওই কৃষক।

গতকাল সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার রামদিয়া কৃষি ব্যাংকে ঘটনাটি ঘটে। মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

ভুক্তভোগীরা হলেন- দেনায়ের সরদার কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা গ্রামের দেনায়ের সরদার ও তার ছেলে তাকবীর সরদার ও জামাতা মোতাকাব্বির মুন্সী। 

ভুক্তভোগী দেনায়েত সরদার জানান, এক মাস আগে গাভী মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের জন্য ৩ লাখ টাকা ঋণ নিতে রামদিয়া কৃষি ব্যাংকে যান তিনি। এ সময় তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও এক কপি ছবি ব্যাংকে জমা দিয়ে আসেন। ২০ আগস্ট ব্যাংকের তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) রাফিজুল ইসলাম কৃষকের বাড়িতে সরেজমিনে তদন্তে যান। পরে মিষ্টি খাওয়ার কথা বলে কিছু উৎকোচ দাবি করেন। দেনায়েত সরদার উৎকোচ দিতে রাজি না হওয়ায় ‘দায়দেনার’ কারণ দেখিয়ে ঋণের আবেদন বাতিল করে দেন ওই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর কৃষক দেনায়েত সরদার বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগ সেলে ই-মেইলের মাধ্যমে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গতকাল সোমবার গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক শাখা ব্যবস্থাপক আব্দুল আজিজ ও তার সহযোগী অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের জন্য রামদিয়া কৃষি ব্যাংকে যান। তদন্ত চলাকালে তদন্ত দলের সঙ্গে দেনায়েত সরদারের জামাতা মোতাকাব্বির মুন্সীর কথা কাটাকাটি হয়।  ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ইলিয়াস হোসেন আগে থেকেই স্থানীয় কিছু লোকজন সাজিয়ে রাখেন। তদন্ত চলাকালে স্থানীয় ওই লোকজন ব্যাংকের মধ্যে প্রবেশ করে অভিযোগকারী ও তার সঙ্গে থাকা ছেলে এবং জামাতার সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তারা ব্যাংকের সবগুলো গেট ও দরজা লাগিয়ে এবং ব্যাংকের সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে অভিযোগকারী ও তার লোকজনকে তদন্ত কর্মকর্তার সামনেই মারধর করে। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রামদিয়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশকে খবর দেয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কৃষক এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজনের কাছ থেকে সাদা কাগজে জোর করে সাই নেন এবং তাদের ছেড়ে দেন।

এ বিষয়ে কাশিয়ানী থানার রামদিয়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একজন গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর ঘুষের অভিযোগ করেন। বিষয়টি তদন্ত করতে গোপালগঞ্জ থেকে কৃষি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যাংকে আসেন। তারা অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনছিলেন। এ সময় অভিযোগকারীর জামাতা উত্তেজিত হলে ব্যাংকের গ্রাহকরা প্রতিবাদ করেন এবং তারা কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কোনো অভিযোগ না থাকায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইলিয়াস হোসেন ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঋণ চেয়ে না পেয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ওই কৃষক। অভিযোগের তদন্ত কমিটি ব্যাংকে আসলে বাদীপক্ষের লোকেরা খারাপ আচরণ করেন। এসময় ব্যাংকে থাকা গ্রাহকরা প্রতিবাদ করেন। পরিস্থিতি খারাপ দেখে ব্যাংকের গেট-দরজা লাগিয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে তাদেরকে উদ্ধার করে।

গোপালগঞ্জ কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক শাখা ব্যবস্থাপক ও অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজ মারধরের কথা স্বীকার করে বলেন, তদন্তের বিষয়টি ছিল তুচ্ছ একটি ঘটনা। আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্তে গিয়েছিলাম। অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনছিলাম। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি, ব্যাংকের মধ্যে এতো লোকজন ঢুকে পড়বে। এ ধরণের ঘটনা ঘটাবে। যা সম্পূর্ণ অনাকাঙ্খিত। ঘটনাটি আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসেছিল।