সারা বাংলা

জনবল ও ভবন সংকট: নিরাপত্তাহীন সংরক্ষিত বনাঞ্চল 

বরগুনার জেলার পাথরঘাটা রেঞ্জ অফিসের আওতাধীন বন কেন্দ্রগুলোতে চলছে দৈন্যদশা। একদিকে জনবল সংকট অন্যদিকে বাসস্থানের সংকট। বন কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের নিজেদেরই এখন কোনো নিরাপত্তা নেই। বনের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। 

বন বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বরগুনার পাথরঘাটা রেঞ্জ অফিসের আওতাধীন পাঁচটি বন কেন্দ্র রয়েছে। চরদুয়ানি, টেংরা, চর লাঠিমারা, হরিণঘাটা, পাথরঘাটা সদর। সাগর ঘেষা এই উপজেলার এসব বনাঞ্চল সুন্দরবনের আদলে সৃষ্ট। বন থেকে প্রায়ই সুন্দরী, গেওয়া, গড়ান, পশুর, বাইন, হেঁতাল, গোলপাতা, খামু, লতা, কেওড়া, ধুন্দুল, আমুর, ছৈলা, ওড়া, কাঁকরা, সিংরা, ঝানা, খলশি গাছ কেটে নিয়ে যায় বনদস্যুরা। কখনো কখনো বন বিভাগ দস্যুদের আটক করে মামলা দিলেও লোকবল সংকটের কারণে বিশাল এই বনভূমিকে রক্ষা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হরিণঘাটা বনের এক বনরক্ষী জানান, ১৯৬৭ সালে বন বিভাগ এই বনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়। বর্তমানে এই বনের আয়তন ১৮ হাজার একর জুড়ে। এছাড়া সাগর তীরে লালদিয়ার চরে নতুন বন হওয়ায় পরিধি আরও বাড়ছে। এটি এখন বন্যপ্রাণীর অভয়রন্য। তবে, এই বিশাল বনের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ছয় জন। 

তিনি আরও জানান, কর্মকর্তা অফিসেই বসেন, একজন বনরক্ষী দরকার হয় তার দেখভালের জন্য। এরপর আমরা চারজন দুটি দলে ভাগ হয়ে বন পাহাড়ায় বেড়িয়ে পড়ি। অথচ বনদস্যুরা জানে আমাদের লোকবল সংকটের কথা। কিন্তু তারপরেও আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টহল দেই। বনদস্যুরা ১৫/২০ জন একত্রিত হয়ে গাছ কাটতে আসে। তখন আর আমাদের কিছুই করার থাকে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক বনরক্ষী বলেন, প্রতি রাতেই শুনি গাছ কাটার শব্দ। আমরা বাধা দিতে যেতে পারি না। কারণ আমরাই থাকি ভাঙা ঘরে। যে কোনো সময় আমাদের ওপর হামলা করতে পারে বনদস্যুরা। আমাদের ভবনগুলো নিরাপদ থাকলে আমরা জীবনের নিরাপত্তায় ভুগতাম না। আমরা জানি কারা বনদস্যু। আজ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে, রাতে আমাদের ওপরে হামলা করবে। 

একই অবস্থা অন্যান্য বনগুলোর। চরদুয়ানি ২ জন, টেংরা ২ জন, চরলাঠি মারা ৩ জন, পাথরঘাটা সদরে ২ জন বনরক্ষী আছেন। 

চরদুয়ানী বনের বনরক্ষীরা বলেন, চোখের সামনেই বন উজার হতে দেখছি। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে আমরা কিছুই করতে পারছি না। এক সময় আমাদের এই চরদুয়ানী বন বিভাগের অফিসে অস্ত্র ছিল। কিন্তু সেই অস্ত্র পটুয়াখালীতে জমা দিয়ে এসেছি। একটি অস্ত্র পাহাড়ার জন্য আইন অনুযায়ী বনরক্ষী থাকা প্রয়োজন তিন জন। কিন্তু সেখানে আমরা বন রক্ষী আছি দুইজন। তাই আইন মেনে অস্ত্র জমা দিয়ে এসেছি। এদিকে, বনদস্যুরো বন উজাড় করে ফেলছে। 

পাথরঘাটা রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত এফ সি সি ও সোহরাফ হোসেন বলেন, আমি ২০১৯ সালে পাথরঘাটায় যোগদান করি। এখানে আসার পর থেকেই দেখেছি লোকবল ও বাসস্থান সংকট। নানা সংকটের পরেও বনদস্যুদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আমরা ৫৩টি মামলা করছি। 

এ বিষয় পটুয়াখালী-বরগুনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী বন সংরক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এর বেশি আর কিছু এখন বলা যাবে না।